এনবিআরে কর্মবিরতি: রাজস্ব ক্ষতি ১১ হাজার কোটি

অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে কলমবিরতি পঞ্চম দিনে পৌঁছায়। এতে রাজস্ব খাতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার পর অচলাবস্থা নিরসনে এবার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন উপদেষ্টা ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। এই আলোচনাকে স্বাগত জানিয়ে আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। গতকাল সোমবার কলমবিরতির পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় ঐক্য পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ সময় ঐক্য পরিষদ তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো—অবিলম্বে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিল; এনবিআর পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ; এবং এনবিআরের প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সুধীসমাজ, ব্যবসায়ী সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে একটি টেকসই ও উপযুক্ত সংস্কার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।

দীর্ঘদিন ধরে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ সম্পর্কে অজ্ঞতায় ছিলেন, যা তাঁদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। এর প্রভাব পড়ে রাজস্ব আদায়েও। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। কিন্তু আন্দোলনের প্রস্তুতি ও চলমান কর্মসূচির প্রভাবে মে মাসের প্রথম ১৮ দিনে আদায় হয়েছে মাত্র ৯ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। এই গতি বজায় থাকলে পুরো মে মাসে রাজস্ব আদায় দাঁড়াতে পারে মাত্র ১৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকায়, যেখানে গত বছরের মে মাসে আদায় হয়েছিল প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় চলতি মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল অন্তত ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে শুধু প্রথম ১৮ দিনেই প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এত বড় ক্ষতির পর সরকার অবশেষে উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মতামত উপেক্ষা করে এবং সংস্কার কমিটির সুপারিশ প্রকাশ না করেই নজিরবিহীন দ্রুততা ও গোপনীয়তার মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া এবং এর উদ্দেশ্য নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন, ব্যবসায়ী মহল, নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পক্ষ প্রশ্ন তুলেছে। বক্তারা বলেন, রাজস্বব্যবস্থার সংস্কারের নামে ৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এনবিআরকে বিনা কারণে বিলুপ্ত করা হয়েছে। যেখানে প্রয়োজন ছিল এনবিআরকে সংস্কারের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা, সেখানে তার বদলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করে রাজস্ব কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে—যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও রীতিনীতির পরিপন্থী।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়কর নীতি) ড. সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব। যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছানো গেলে এনবিআরের কর্মকর্তারা এ ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!