জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অধ্যাদেশ বাতিলের আন্দোলনের সময় দাপ্তরিক কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের আরও নয়জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তের পাশাপাশি এসব কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে এনবিআরে সংযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার (১৮ আগস্ট) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান সই করা পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের চারজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। চারজন হলেন—সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু; মোংলা কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার আবুল আলা মোহাম্মদ আমীমুল ইহসান খান; চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির যুগ্ম কমিশনার সানোয়ারুল কবির এবং খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। অপরদিকে, আয়কর বিভাগের পাঁচজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন-আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা; কর অঞ্চল-৭, ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার সুলতানা হাবীব; কর অঞ্চল ফরিদপুরের যুগ্ম কর কমিশনার মো. মেসবাহ উদ্দিন খান; কর অঞ্চল দিনাজপুরের যুগ্ম কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া; সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) পরিচালক ও যুগ্ম কর কমিশনার চাঁদ সুলতানা চৌধুরানী।
আন্দোলনের কারণে গত দেড় মাসে এনবিআরের সদস্য থেকে প্রহরী পর্যন্ত মোট ৩১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ ৯ জনসহ মোট ৪০ জন হয়েছে।
পৃথক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকার কর্তৃক গত ১২ মে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারির পর এর বিরোধিতা করে এনবিআর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগের কর্মচারীদের কর্মসূচি চলাকালীন দায়িত্বরত কর্মচারীদের দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনে বাধা প্রদান করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কাজ ত্যাগ করে রাজস্ব ভবনে আসতে বাধ্য করতে সংগঠকের ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তাই তাঁদের (নয় কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ধারা-৩৯ (১) অনুযায়ী তাঁদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তাঁরা বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
এর আগে বিভিন্ন দফায় আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক অবসর, সাময়িক বরখাস্ত, বদলির মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। পরে বিভিন্ন মহল থেকে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে এনবিআর কেবল বদলি করেই শান্ত থাকে। এবার প্রায় একমাস পর ফের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত এল। এনবিআর দুই ভাগ করে গত মে মাসে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সেই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনা হবে। আর সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান কাঠামোতেই চলবে এনবিআরের সব কাজ। এর মধ্যে সংস্থাটির কর্মীরা নানা অভিযোগ তুলে এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।
দাবি আদায়ে ২৮ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআর কর্মীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের কার্যক্রম। পরের দিনও কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে সংস্থাটির সেবাকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সংকট নিরসনে সেদিন এনবিআর কর্মীদের অবিলম্বে কর্মস্থলে ফেরা এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয়। পরে সংকট সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার। পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়। এরপর আন্দোলনের সামনের সারির নেতাদের ‘দুর্নীতির তথ্যানুসন্ধানে’ নামে দুদক। তিন দফায় ১৬ জনের তথ্যানুসন্ধান শুরুর তথ্য দেয় সংস্থাটি। পরে আন্দোলন থামার পর একের পর এক কঠোর ব্যবস্থা নেয় এনবিআর। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর এবং আন্দোলনে সম্পৃক্তদের একের পর এক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আসে।
** অধ্যাদেশ এক সপ্তাহের মধ্যে সংশোধন হতে পারে
** এনবিআর সংস্কার: ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু একটা হবে
** প্রকাশ্যে ঘুস গ্রহণ: সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বরখাস্ত
** বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত আরও তিন কর্মকর্তা
** গোপন নথি ফাঁস: উপ কমিশনার বরখাস্ত
** এনবিআর চেয়ারম্যানকে নিয়ে কটূক্তি, নিরাপত্তা প্রহরী বরখাস্ত
** বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা
** অস্ট্রেলিয়ায় পলায়ন: প্রথম সচিব তানজিনা বরখাস্ত
** চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত