ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (২৯ জুন) এ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়। এই ছয়জনের মধ্যে একজন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি, চারজন সিনিয়র সহ-সভাপতি।
এনবিআরের যে ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে, তাঁরা হলেন—এর আগে যে ছয়জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে, সে ছয়জন কর্মকর্তা হলেন—এনবিআর সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম; নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার; কর অঞ্চল-৮, ঢাকার অতিরিক্ত কর কমিশনার ও ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মির্জা আশিক রানা; কর অঞ্চল-১৬, ঢাকার যুগ্ম কর কমিশনার ও ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা; কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) এর অতিরিক্ত কমিশনার এবং ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাধন কুমার কুণ্ডু এবং বিসিএস কর একাডেমির যুগ্ম পরিচালক (যুগ্ম কর কমিশনার) ও ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, অনুসন্ধানে থাকা অন্তত পাঁচ কর্মকর্তা সরাসরি এনবিআরের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি। এই ব্যানারেই এনবিআরে আন্দোলন চলছে। মির্জা আশিক রানা ও শাহরীন সুস্মিতা এই পরিষদের সহসভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
এনবিআরের সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে গত ১২ মে থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করেন। এর ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়কারী এ সংস্থায় এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, যা সেবাদানে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। সরকারের জারি করা একটি অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ১২ মে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠন করা হয়। এর লক্ষ্য ছিল নীতিগত সিদ্ধান্ত, যেমন করহার নির্ধারণ ও কর আদায়ের কাজ আলাদা করা।
অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরেই রাজস্ব খাত সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির একটি শর্ত ছিল—রাজস্বনীতি ও আদায়ের কাজ আলাদা দুটি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালনা করা। এনবিআরের কর্মকর্তারা এ দুটি বিভাগ গঠনের বিষয়ে বড় ধরনের আপত্তি না জানালেও, তাঁরা চাইছেন এই বিভাগগুলোর পদায়নে রাজস্ব খাতের নিজস্ব কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। অন্যদিকে, সরকার বলছে, নিয়োগে যোগ্যতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে—যার মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাও নিয়োগ পেতে পারেন।
আন্দোলনকারীরা এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজস্ব খাতের চলমান সংস্কারে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং আন্দোলনকারীদের দমন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে রোববার (২৯ জুন) সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এনবিআরের সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকার হুঁশিয়ার করে বলেছে—তারা কাজে যোগ না দিলে জনগণ ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে।