** তালিকায় থাকা তিনজন-ই সম্প্রতি প্রত্যাহার হওয়া এনবিআরের কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন
** মাত্র দুইদিন আগে ২৯ জুন আরও ছয়জন কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু করে দুদক, যার মধ্যে একজন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও চারজন সিনিয়র সহ-সভাপতি
মাত্র দুইদিন (২৯ জুন রোববার) পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আরও পাঁচজন কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যার মধ্যে তিনজন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সম্প্রতি প্রত্যাহার হওয়া ‘কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন পাঁচ কর্মকর্তার দুর্নীতির তথ্যানুসন্ধানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাঁচ কর্মকর্তা হলেন-বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অতিরিক্ত কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য মো. আব্দুর রশীদ মিয়া, এনবিআর সদস্য (আন্তর্জাতিক কর) মো. লুৎফুল আজীম, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এর সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমানে এনবিআর সদস্য (কর অডিট, ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন) মো. আলমগীর হোসেন, উপ-কর কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম কুশল, যুগ্ম কমিশনার (এনবিআরের প্রথম সচিব) ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য মো. তারেক হাসান।
এর আগে যে ছয়জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে, সে ছয়জন কর্মকর্তা হলেন—এনবিআর সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম; নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার; কর অঞ্চল-৮, ঢাকার অতিরিক্ত কর কমিশনার ও ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মির্জা আশিক রানা; কর অঞ্চল-১৬, ঢাকার যুগ্ম কর কমিশনার ও ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা; কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) এর অতিরিক্ত কমিশনার এবং ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাধন কুমার কুণ্ডু এবং বিসিএস কর একাডেমির যুগ্ম পরিচালক (যুগ্ম কর কমিশনার) ও ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান।
দুদকে জমা হওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, এনবিআরের কতিপয় অসাধু সদস্য ও কর্মকর্তা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের করফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও এনবিআর কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে, প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা ঘুষ না পেয়ে করফাঁকি দেওয়ার মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালিককে হয়রানি করেন বলে জানা যায়।
অনেক করদাতা আগাম কর দেন। আবার কেউ কেউ বেশি কর দেন। নিয়ম হচ্ছে এই কর হিসাব-নিকাশ করার পর বেশি দেওয়া হলে তা ওই করদাতাকে ফেরত দিতে হয়। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, করের বাড়তি টাকা ফেরত পেতে আরও অন্তত অর্ধেক টাকা ঘুষ বা উপহারে খরচ হয়। অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা করের টাকা ফেরত দিতে নিজেরাও কামিয়ে নিচ্ছেন মোটা টাকা।
অনুরূপভাবে, বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকরিকালীন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও ক্ষেত্র বিশেষে আয়কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে ও নিজে লাভবান হয়ে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে দুর্নীত, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এমন অভিযোগ রয়েছে।