আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত প্রায় দুই শতাধিক কর্মকর্তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান খানের কাছে নি:শর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। বিসিএস (কর) ক্যাডারের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার (৮ জুলাই) আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যাচভিত্তিক দেখা করে এই ক্ষমা চেয়েছেন। এর মধ্যে ২৮ থেকে ৪০ ব্যাচের কর্মকর্তা রয়েছেন। ক্ষমা চাওয়া কর্মকর্তারা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে এনবিআরের একটি সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এনবিআরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই দুঃখপ্রকাশের মধ্য দিয়ে আন্দোলন ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে সৃষ্ট অস্বস্তিকর পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হবে এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। এর ফলে মাঠপর্যায়ে কাজের পরিবেশ ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে আমরা আশা করছি। অপরদিকে, ওই সময়ে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আয়কর বিভাগের প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা ব্যাচভিত্তিকভাবে চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, চেয়ারম্যান তাদের বলেছেন, ‘আমার পক্ষে ক্ষমা করতে সমস্যা নেই। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিষয়ে ক্ষমা করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই।’
২৯ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। ৩০ জুন এনবিআর চেয়ারম্যান দপ্তরে ফিরে আসেন। ওইদিন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘যা কিছু হয়েছে সব কিছু ভুলে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমরা সবাই কাজ করবো। যে কাজ গুলো আছে সেগুলো এগিয়ে নিয় যাব। আশা করি ভবিষ্যতে এনবিআরকে আর এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না।’
অপরদিকে, এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধন, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দাবিতে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছে। ৬১ দিন চলে এই আন্দোলন। প্রথম অবস্থায় এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধনসহ কয়েকটি দাবি থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে ‘চেয়ারম্যানের অপসারণের’ এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। তবে সরকার কঠোর হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় ২৯ জুন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। তবে কর্মসূচি প্রত্যাহার পরপরই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ১৬ জন কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। আন্দোলনে উস্কানি দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় সরকার এনবিআরের দুইজন সদস্য, একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করে। একইসঙ্গে রাজস্ব ক্ষতি সাধন করে কাস্টম হাউসের কার্যক্রম বন্ধ রাখায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এই আন্দোলনের আড়ালে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র ছিলো বলে তথ্য পায় গোয়েন্দা সংস্থা। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ৮৪৫ পৃষ্ঠার মেসেজ আদান-প্রদানের বিশদ তথ্য এখন গোয়েন্দা সংস্থা।
অপরদিকে, সোমবার (৭ জুলাই) ঢাকা কাস্টম হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘আন্দোলনে জড়িত থাকা এবং সীমালঙ্ঘনকারী কর্মকর্তাদের বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা হবে। তবে বাকিদের ভয়ের কোনো কারণ নেই, যদি তাঁরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রত্যেকে যদি দায়িত্বশীল আচরণ করে, নিজেদের দায়িত্ব ঠিকঠাক সম্পন্ন করে, তাহলে আমি মনে করি না যে তাদের ভয়ের কোনো কারণ আছে। আর কেউ কেউ হয়ত একটু…একটু না অনেক বড় আকারেই, যেটা আমরা বলব সীমালঙ্ঘন করেছে, সেটা হয়ত ভিন্নভাবে দেখা হবে। তবে সাধারণভাবে আমার মনে হয় না যে কারো কোনো ভয়ের কারণ আছে।’
উল্লেখ্য, এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামের দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর প্রতিবাদে কলম বিরতি ও কমপ্লিট শাটডাউনসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
** সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ভিন্নভাবে দেখা হবে: চেয়ারম্যান
** ‘সব কিছু ভুলে গিয়ে আমরা রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কাজ করবো’
** শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহার
** দুই কমিশনারসহ পাঁচজনের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক
** তিন সদস্য ও এক কমিশনার বাধ্যতামূলক অবসরে
** চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত
** এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে
** ঐক্য পরিষদ নেতাসহ ৬ কর্মকর্তা দুদকের জালে
** ‘পক্ষপাত ছাড়া কাজ করলে কোনো সমস্যা হবে না’
** ‘শাটডাউন কর্মসূচি করুক, কোন বৈঠক হবে না’
** এনবিআর সংকট নিরসনে ৫ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন
** চেয়ারম্যানের অপসারণ নয়, আলোচনার তাগিদ
** কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে না ফিরলে কঠোর হবে সরকার
** বদলির আদেশ ছিঁড়ে প্রতিবাদ, ২৫-২৬ কলম বিরতি
** এনবিআর আন্দোলনে আওয়ামী ঘনিষ্ঠদের ইন্ধনের সন্দেহ