এনআইডি সেবা নিয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনআইডি অনুবিভাগের কর্মকর্তারা। নিজেদের দাবি জানাতে তারা আজ (৬ মার্চ) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের দপ্তরের সামনে জড়ো হয়েছেন।

এনআইডি অনুবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন থেকে এনআইডি সেবা সরিয়ে নেওয়ার যে পরিকল্পনা হচ্ছে, তা রুখে দিতে তারা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তারা আরও জানিয়েছেন, যদি এই পদক্ষেপে কাজ না হয়, তবে প্রথমে তারা অর্ধবেলা কর্মবিরতি পালন করবেন, এরপর পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। তাও কার্যকর না হলে, সারা দেশে নির্বাচন কমিশনের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।

জানা গেছে, জন্মনিবন্ধন, এনআইডি এবং পাসপোর্ট সেবা সম্পর্কিত দুর্ভোগ ও জটিলতা নিরসনে স্বতন্ত্র কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্য ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন), ২০২৫’ নামে একটি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, সুরক্ষা সেবা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মতামত নেওয়া হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ইসি সচিবালয়ের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, আইনের খসড়া পর্যালোচনা ও মতামত প্রদান সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রথম সভা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে আইন করা হয়েছিল, ক্ষমতার পালাবদলে আবার তা বাতিল চেয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তাদের দাবি অনুযায়ী আইনটি বাতিল হলে এনআইডি সেবা বরাবরের মতোই নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে। এ প্রস্তাব অনুমোদনের পর সরকারকে এখন অধ্যাদেশ জারি করে আইনটি বাতিল ও আগের আইন বহাল করতে হবে।

এ ধারাবাহিকতায় সবশেষ গত ১৬ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিজেদের কাছে রাখতে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এটা সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এতদিনে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা’ নামে একটি স্বতন্ত্র, স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠন করার সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে। তবে এ বিষয়ে ২৬ জানুয়ারি সিইসি নাসির উদ্দিন আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, ভোটার এনআইডি কার্ড এবং ভোটার রেজিস্ট্রেশন যা তারা বলেছেন, পরবর্তী পর্যায়ে স্বাধীন অধিদপ্তর বা পরিদপ্তরে হস্তান্তরের জন্য সাজেস্ট করছেন। কিন্তু যদি আরেকটি কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়, তাহলে আমি কী তার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারব? এটি অসম্ভব।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন সময়োপযোগী। তবে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন না রেখে, সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা উচিত। পাশাপাশি, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে এনআইডি এবং এনআইডির ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অনাবশ্যক জটিলতা ও জনদুর্ভোগ পরিহার করা জরুরি। এই উদ্দেশ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পরিমার্জন করে উপস্থাপন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, সিভিল রেজিস্ট্রেশনের পদ্ধতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সুসংহত করতে একটি সংবিধিবদ্ধ, স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্য আইন সংশোধন করা সমীচীন হবে, এবং এজন্য ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন), ২০২৫’ এর খসড়া নিয়ে মতামত নেওয়া হচ্ছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!