দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে ব্যাংকের সেবা সহজ করতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই সেবা এখন শুধু প্রত্যন্ত এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। যেখানে গ্রাহকরা সহজে ব্যাংকের সেবা পাচ্ছেন, সেখানে ঋণও গ্রহণ করতে পারছেন। ব্যাংক খাতের নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এজেন্ট ব্যাংকিং মানুষের আকর্ষণ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে দিন দিন জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে, আস্থা ও বিশ্বাসও বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু এক বছরের মধ্যে গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে, আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে, ঋণ বিতরণ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স সংগ্রহে রেকর্ড ভাঙা হয়েছে। এ সেবার মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার পথ প্রশস্ত হয়েছে, যেখানে প্রতিটি ধাপে পরিবর্তন ও উন্নয়নের ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকসংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার। ২০২৫ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ। এক বছরে গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ লাখ ৭১ হাজার, যা প্রায় ৬ শতাংশের সমান।
ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেও এজেন্ট ব্যাংকিং চমক দেখিয়েছে। ২০২৪ সালের জুনে ঋণ বিতরণ হয়েছিল ১৮,৭৪১ কোটি টাকা, যা এক বছরে বেড়ে ২৯,০০৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। অর্থাৎ ঋণ প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময় আমানতের পরিমাণও ৪০,০০০ কোটি টাকা থেকে ৪৫,৬০০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ৫,৫৩২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
তবে এই উন্নয়ন ও বৃদ্ধির সঙ্গে কিছু হতাশাজনক দিকও রয়েছে। প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে এজেন্ট এবং আউটলেটের সংখ্যা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এক বছরে এজেন্টের সংখ্যা ৬১৮ কমে ১৫,৩৭৩ হয়েছে, আর আউটলেটের সংখ্যা ৯১৬ কমে ২০,৫৭৭-এ দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকের সংখ্যা স্থিতিশীল থেকে ৩১টি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, গত বছরের আগস্টে কিছু পরিবর্তনের কারণে সেবার কার্যক্রমে প্রভাব পড়েছিল। তবে নতুন উদ্যোগ ও সেবার মাধ্যমে গ্রাহক সংখ্যা এবং লেনদেন আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে বিমা সুবিধাও চালু করা হয়েছে, ফলে গ্রাহকরা ঘরের কাছেই সহজে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
এজেন্ট ব্যাংকিং এখন কেবল গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যম নয়, বরং প্রবাসী আয়ের নিরাপদ ও দ্রুত বিতরণের অন্যতম চ্যানেল হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের রেমিট্যান্সও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে; গত জুনে ১ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা থেকে চলতি বছরের জুনে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এপ্রিল-জুনে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসী আয়ের ৫৫.৮ শতাংশ, অর্থাৎ ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এরপরের অবস্থানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৫১ হাজার কোটি এবং ব্যাংক এশিয়া ১৪ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এজেন্ট ব্যাংকিং ধীরে ধীরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষদের জন্য কার্যকর মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি দেশের প্রান্তিক এলাকায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন পৌঁছে দেওয়ার একটি বিপ্লব।