মাত্র এক টুকরো সিগারেট থেকেই তিন দিন ধরে দাউদাউ করে জ্বলেছে গ্রিসের চিওস দ্বীপ। আগুনে পুড়ে গেছে ১০ হাজার একরের বেশি বনভূমি, চারণভূমি ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বিস্তীর্ণ এলাকা। রোববার শুরু হওয়া দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসে বুধবার, তবে এখনও শত শত দমকলকর্মী কাজ করছেন আগুনের পুনরায় ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে। আগুন লাগানোর অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে এক জর্জিয়ান নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ওই নারী একটি জ্বলন্ত সিগারেট ফেলে দিলে সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চিওস দ্বীপের ভয়াবহ পরিস্থিতি সামলানোর আগেই বুধবার বিকেলে গ্রিসের আরেকটি দ্বীপেও ছড়িয়ে পড়ে নতুন দাবানল। বৃহস্পতিবার দেশটির দমকল বিভাগ জানিয়েছে, আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। একই সময়ে দাবানলে পুড়ছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনও। (তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, এপি)
ইউরোপজুড়ে তাপপ্রবাহ তীব্র হয়ে ওঠায় একের পর এক দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অঞ্চলে। এরই অংশ হিসেবে বুধবার গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ ক্রিটে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আগুন। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়া হয় নিরাপদ স্থানে। আগুনে কিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে জানা গেছে, প্রায় তিন হাজার মানুষকে সরিয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
গ্রিসের দমকল বিভাগ জানিয়েছে, ক্রিট দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ২৩০ জনের বেশি দমকলকর্মী। আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ৩৮টি ফায়ার ইঞ্জিন ও পানিবাহী ট্রাক। এদিকে দেশটির হালকিদিকি অঞ্চলেও নতুন করে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ১৬০ জন দমকলকর্মী ও ৪৯টি ফায়ার ট্রাক আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রবল ঝড়ো হাওয়ার কারণে আগুন দ্রুত বিস্তার লাভ করছে, যা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলছে। অনেক এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ফের দাউদাউ করে জ্বলে ওঠায় পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হয়ে উঠেছে। দমকল বিভাগ জানিয়েছে, রাজধানী এথেন্স থেকে অতিরিক্ত সহায়তাকারী দল ও অগ্নিনির্বাপণ বিমান পাঠানো হয়েছে। এর আগে রোববার ভয়াবহ দাবানলে আক্রান্ত হয় গ্রিসের চিওস দ্বীপ। ওই দাবানলের সূত্রপাত ঘটানোর সন্দেহে একজন জর্জিয়ান নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চিওস দ্বীপে আগুন লাগানোর ঘটনায় অভিযুক্ত জর্জিয়ান নারীকে অনিচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিবছরই গ্রীষ্মকালে দাবানলের মুখে পড়ে দক্ষিণ ইউরোপের দেশ গ্রিস। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, এবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আগুনের তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দাবানলের প্রভাব এখন শুধু গ্রিসেই সীমাবদ্ধ নয়। জার্মানির সাক্সনি রাজ্যের একটি বনেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে, যাতে অন্তত দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং শতাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, স্পেনের কাতালোনিয়া অঞ্চলেও দাবানলে পুড়ে গেছে প্রায় ১৬ হাজার একর জমি, যেখানে প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন কৃষক।
এপি’র খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে কাতালোনিয়ায় দাবানলের সূচনা হয়, যা বুধবার আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। আগুনের তীব্রতায় আকাশে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ১৪ হাজার মিটার (৪৫ হাজার ফুট) উচ্চতার ধোঁয়া ও ছাইয়ের বিশাল কুণ্ডলী। দেশটির ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, এটি কাতালোনিয়ায় রেকর্ড করা অন্যতম বড় দাবানল। ইউরোপজুড়ে চলতি বছরের প্রচণ্ড তাপদাহ জনজীবনকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।