এক মন্ত্রীর বিদেশে ২৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে: টিআইবি

** শত কোটির মালিক ১৮ প্রার্থী, ১৬৪ জনের আয় কোটির ওপরে: টিআইবি

Final Holofnama presentation rev2 26122023 page 048

বার্তা প্রতিবেদক: বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার এক মন্ত্রীর বিদেশে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। তবে তিনি নির্বাচনী হলফনামায় এ তথ্য দেননি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এই তথ্য জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ কার্যালয়ে ‘নির্বাচনী হলফনামায় তথ্যচিত্র, জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে টিআইবি ওই মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেনি। সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ চাইলে তথ্যপ্রমাণসহ তারা সবকিছু সরবরাহ করবেন বলে জানিয়েছেন টিআইবির কর্মকর্তারা।

000

মন্ত্রীর বিদেশে সম্পদ থাকার তথ্য জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তাদের কাছে প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী সরকারের মন্ত্রিসভার অন্তত একজন সদস্যের নিজ নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার প্রমাণ রয়েছে। হলফনামায় তা দেখা যাচ্ছে না। ওই মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনো বিদেশে সক্রিয়ভাবে আবাসন নির্মাণ (রিয়েল স্টেট) ব্যবসা পরিচালনা করছে। সেগুলোর মূল্য ১৬ দশমিক ৬৪ কোটি পাউন্ড বা ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। ওই মন্ত্রী তার হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পদের ব্যাপারে তথ্য দেননি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই মন্ত্রী ২০১০ সালে প্রথমে একটি কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ১ দশমিক ৭৩ কোটি পাউন্ড। এরপর ২০১৬ সালে আরেকটি কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ৭ দশমিক ৩১ কোটি পাউন্ড। ২০১৯ সালে তৃতীয় কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ২ দশমিক ৭৯ কোটি পাউন্ড। তিনি ২০২০ সালে চতুর্থ কোম্পানি চালু করেন, যার সম্পদ মূল্য ২ দশমিক ১৫ কোটি পাউন্ড এবং ২০২১ সালে পঞ্চম ও ষষ্ঠ কোম্পানি খোলেন, যেগুলোর বর্তমান সম্পদ মূল্য ৩ দশমিক ২২ কোটি পাউন্ড।

Final Holofnama presentation rev2 26122023 page 037

নাম জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেহেতু তথ্য গোপনের ব্যাপার রয়েছে এবং তিনি (মন্ত্রী) নিজে তা প্রকাশ করেননি। সে কারণে তার নাম প্রকাশ করা টিআইবির এখতিয়ারবহির্ভূত। তবে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ যদি টিআইবির কাছে তথ্যসূত্র জানতে চায়, তাহলে তারা তথ্যপ্রমাণসহ তা দেবেন।

অপরদিকে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের ২৭ শতাংশ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। আর ১৮ জন প্রার্থী শত কোটি টাকার বেশি সম্পদের হিসাব দিয়েছেন তাদের হলফনামায়। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য তুলে ধরেছে টিআইবি।

Final Holofnama presentation rev2 26122023 page 038

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, হলফনামা অনুযায়ী বছরে কোটি টাকা আয় করেন, এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৬৪ জন। তবে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদর্শিত সম্পদ কোনো উপায়ে অর্জিত, তা যাচাই করা হয় না। এবারের নির্বাচনে ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাদের হলফনামায় দেখানো সম্পদের তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলন করে তা তুলে ধরেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন একজন প্রার্থী। সম্পদের হিসাবে এটাই সর্বোচ্চ। বর্তমান সংসদে ৬২ শতাংশ ব্যবসায়ী রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আগের তিনটি এবং এবারের নির্বাচন মিলিয়ে সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। আর গত ১৫ বছরে নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে ২১ শতাংশ।

Final Holofnama presentation rev2 26122023 page 039

কোন দলে কত কোটিপতি

নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশের মূল পেশা ব্যবসা। আর বাৎসরিক আয় ১ কোটি টাকার বেশি এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৬৪ জন। ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৮ জন। স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা ৪৮০ জন। এছাড়াও ১০ কোটি টাকার বেশি আছে এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। ৫০ কোটি টাকার বেশি আছে ১ দশমিক ০৭ শতাংশ। এক কোটি টাকাও নেই এমন প্রার্থী ৭২ দশমিক ০৯ শতাংশ। কোটিপতি প্রার্থীর মধ্যে ২৩৫ জন আওয়ামী লীগের, ১৬৩ জন স্বতন্ত্র, ৪৭ জন জাপা, ১৭ জন জেপি, ৭ জন জাসদ, ৬ জন তৃণমূল বিএনপি, ৫ জন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির।

আয়ের শীর্ষে ১০ মন্ত্রী

গত পাঁচ বছরের আয়ের শীর্ষে রয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তার আয় হয়েছে ২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তার আয় বেড়েছে ২৭৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের আয় বেড়েছে ২২৮ শতাংশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ‍ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের আয় বেড়েছে ২২৭ শতাংশ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের আয় বেড়েছে ১৬৪ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের আয় বেড়েছে ১৪৮ শতাংশ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর আয় বেড়েছে ১২২ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয় বেড়েছে ১১৯ শতাংশ এবং খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের আয় বেড়েছে ৯১ শতাংশ।

শীর্ষ ২০ শত কোটি প্রার্থী

নির্বাচনী হলফনামায় একশ কোটি টাকা বেশি আছে এমন প্রার্থীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পাট ‍ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তার সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে বাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এ কে একরামুজ্জামান। তার সম্পদ ৪২১ কোটি টাকা। সালমান এফ রহমানের সম্পদ ৩১৫ কোটি টাকা। কুমিল্লা-৮ আসনের এমপি আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিনের সম্পদ ৩০৬ কোটি, কুমিল্লা-৩ আসনের এমপি আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের ২৭৭ কোটি, চুয়াডাঙ্গা-১ স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীয় কুমার আগরওয়ালার ২৭৬ কোটি, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের এমপি আব্দুল মমিন মন্ডলের ২৫৩ কোটি টাকা, নারায়ণগঞ্জ-১ স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মুর্তজার ২৩৩ কোটি, নংসিংদী-৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ১৭৪ কোটি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাঈদ খোকনের ১৬৩ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।

Final Holofnama presentation rev2 26122023 page 045

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!