নানা কারণে বিভিন্ন সময় অপ্রদর্শিত অবস্থায় থেকে যাওয়া অর্থ বৈধ করতে আগ্রহীদের জন্য ‘এক্সিট রুট’ রাখতেই সীমিত পরিসরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার প্রস্তাবের কথা বলেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অর্থ উপদেষ্টার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বাজেটে প্রস্তাবিত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা বিষয়ক প্রশ্নে এমন কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন এলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এনবিআর চেয়ারম্যানকেও কথা বলতে বলেন। পরে নিজেও এ নিয়ে কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ‘বৈষম্যবিরোধী’ চেতনার বাজেটেও অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রাখা যে ‘ভালো কিছু হয়নি’ তা সংবাদ সম্মেলনে মেনে নেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা বলছি না যে খুব ভালো জিনিস করে ফেলছি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে। অর্থ উপদেষ্টার এ বক্ত্যব্যের আগে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, একটি ‘এক্সিট রুট’ রাখার জন্যই সীমিত পরিসরে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আগে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার যে বিধান ছিল সেটা নতুন সরকার আসার পর পরই আমরা বাতিল করে দিয়েছি। কালো টাকার আরেকটা প্রবিধান ছিল যা ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। সেটাকে আমরা মেয়াদ বাড়াইনি। সেটা ছিল যদি কেউ জমি অথবা ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনে তাহলে একটু বেশি কর দিলে এটার ওপর সরকার কিংবা অন্য কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না। এটাও আমরা বাড়াই নাই। ফ্ল্যাট কিংবা জমি কিনলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে কর দিলে এনবিআর এ বিষয়ে আর কোনো প্রশ্ন করত না। সেটা আমরা একটু যৌক্তিক করেছি। দুইভাগে ভাগ করেছি।
এর ব্যাখ্যায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যারা নিজের জমিতে বাড়ি করবে, তারা অনেক সময় বিদেশ থেকে টাকা আনছে। অনেক সময় তারা বৈধ চ্যানেলে (ব্যাংকের মাধ্যমে) টাকা আনেন না। নানা কারণে এসব টাকা অপ্রদর্শিত অবস্থায় থেকে যায়, তাই তাদের যদি একটা এক্সিট রুট থাকে, তাই আমরা বলেছি কর দিয়ে এটা ঘোষণা দিলে তা মেনে নেব। এর মানে এই না যে অন্য কোনো সংস্থা এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। অন্য সংস্থাও প্রশ্ন করতে পারবে। এই টাকাও আমরা দ্বিগুণ করে দিয়েছি। আগে যা দেওয়া লাগত এখন দ্বিগুণ দিতে হবে।
বর্তমানে ঢাকার গুলশান মডেল টাউন, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত ২০০ বর্গমিটারের আয়তনের ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টে প্রতি বর্গমিটারে ৬ হাজার টাকা কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে। আগামী অর্থবছর থেকে এটি বেড়ে ভবন, ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে খরচ করতে হবে ২ হাজার টাকা করে; অর্থাৎ বর্গমিটারে (১০ দশমিক ৭৬৩৯ বর্গফুট) খরচ হবে ২১ হাজার ৫৩০ টাকা, যা ২৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। এবার ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব এলাকায় অনধিক ২০০ বর্গমিটার পর্যন্ত কর দিতে হবে, প্রতি বর্গফুটে ৯০০ টাকা করে; এতে প্রতি বর্গমিটারে কর হিসেবেই খরচ হবে ৯ হাজার ৬৮৮ দশমিক ৫ টাকা।
এছাড়াও বর্তমানে ঢাকার গুলশান মডেল টাউন, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত অনধিক ২০০ বর্গমিটার আয়তনের ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টে প্রতি বর্গমিটারে ৪ হাজার টাকা কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যায়। এ ধরনের ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে আসছে অর্থবছরে প্রতি বর্গফুটে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে খরচ করতে হবে; এক্ষেত্রে ৩৮৪ শতাংশ পর্যন্ত কর বেড়ে প্রতি বর্গমিটারে খরচ হবে ১৯ হাজার ৩৭৭ টাকা। এভাবে এলাকাভেদে প্রতি ক্ষেত্রেই কর হার বাড়ানো হয়েছে।