এইচএস কোডের ভুলে ৪০০% জরিমানা, ব্যবসায়ীরা হয়রানি হচ্ছেন: ডিসিসিআই

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেছেন, পণ্যের বিবরণ সঠিক থাকলেও এইচএস কোড ভুল থাকার কারণে কাস্টমসে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। যার ফলে ব্যবসায়ীদের অনেক সময় হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। এক্ষেত্রে পণ্যের বিবরণ এবং এইচএস কোডের যে কোন একটি সঠিক থাকলে কাস্টমস আইন, ২০২৩-এর ৮৬(১) ধারা সংশোধন করে অ্যাসেসমেন্ট পর্যায়ে দাখিলকৃত পণ্য ঘোষণার সংশোধন ও প্রত্যাহারের সুযোগ প্রদান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান এফসিএমএ-এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন ডিসিসিআই এর প্রতিনিধিরা। এসময় সভাপতি আশরাফ আহমেদ চেয়ারম্যানের প্রতি এই আহ্বান জানান।

ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, দেশের জটিল রাজস্ব কাঠামোর জন্য আমাদের কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যবসা পরিচালনায় নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখী হচ্ছেন। তাই এ খাতের উদ্যোক্তাদের বিকাশে সহায়ক এবং সহজ রাজস্ব কাঠামো প্রণয়নের উপর জোরারোপ করেন। বিদ্যমান করহার না বাড়িয়ে, করজাল সম্প্রসারণের উপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি জানান, বর্তমান আইনে ব্যবসায়িক ক্ষতিকে অন্যান্য ব্যবসায়িক উৎসের আয়ের সাথে সমন্বয় করতে না পারলে ব্যবসায়ীদের উপর অতিরিক্ত করের বোঝা আরোপিত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ধারা ৩৭-এর অনুরূপ বিধান পুনঃবহালের প্রস্তাব করেন। কর প্রদান ও কর সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি সহজীকরণের লক্ষ্যে আয়কর ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার উপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি। উৎসে করকে এই মুহূর্তে অগ্রিম করের কিস্তির সাথে সমন্বয় করা না হলে এমএসএমই কর্তৃক প্রদানকৃত পণ্য ও সেবার পরিশোধকৃত অর্থের থেকে কর্তনকৃত উৎসে করকে পরবর্তী কর বছরে আয়করের সাথে ক্যারি-ফরওয়ার্ড করার সুযোগ প্রদানের বিধান রাখার আহ্বান জানান সভাপতি।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ লোক রাজস্ব প্রদান করে, যেখানে ভারতে এ হার ২৩ শতাংশ। বিদ্যমান বাস্তবতায় রাজস্ব আহরণের হার বাড়াতে নিজেদের করজাল সম্প্রসারণের কোন বিকল্প নেই বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন। আমাদের মোট রাজস্বের সিংহাভাগই আসে বিদ্যমান করদাতাদের কাছ থেকে এবং সমাজের একটি বড় অংশই করজালের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে চাপ বাড়ছে বিদ্যমান করদাতাদের উপর। এতে করজাল সম্প্রসারণ করা সম্ভব না হলে বিদ্যমান করদাতারা কর প্রদানে নিরুসাহিত হবেন। তাই করজাল সম্প্রসারণে এনবিআর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগামী ৬ মাস কাজ করবে। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন স্তরে কর আহরণের কারণে বিশেষ করে কর্পোরেট করের ইফেক্টিভ হার বেড়ে যায়। বিষয়টি এনবিআর গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। সামগ্রিক রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা না কমিয়ে, করহার যৌক্তিকীকরণের পাশাপাশি দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। ব্যবসায়িক লেনদেন প্রক্রিয়া ক্যাশলেস ও ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য ব্যবসায়ী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। যার মাধ্যমে কর আহরণের হার আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি রাজস্ব খাতের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি সমাধানের লক্ষ্যে ডিসিসিআইকে প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনা পূর্বক সুপারিশ পেশের আহ্বান জানান, যা এনবিআরকে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে সহযোগিতা করবে বলে মত প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে এনবিআর প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে।

ঢাকা চেম্বার উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, এনবিআর সদস্য (শুল্কনীতি) মো. মাসুদ সাদিক, সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

***

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!