পাবনার চাটমোহরে ঋণখেলাপির মামলার জেরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা ও শাখা কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক শাখায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত লোকমান হোসেন ফৈলজানা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং একই ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক।
এদিকে শাখা ব্যবস্থাপক শামসুজ্জামান নয়ন আহত হলে তাকে পার্শ্ববর্তী আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ফৈলজানা শাখার মুখ্য কর্মকর্তা এস এম বশির উদ্দিন জানান, ২০১৮ সালে শাখা থেকে ৩ লাখ টাকা সিসি ঋণ নেন ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ও ইউপি সদস্য লোকমান হোসেন। এ ঋণ প্রতিবছর নবায়নযোগ্য হলেও গত দুই বছর ধরে তিনি তা নবায়ন করেননি। ফলে ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী তাকে ঋণখেলাপি হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সে অনুযায়ী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
নিয়মমাফিক ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। গত ২৫ মে পাবনার অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলাটির নম্বর ৮৪। মামলা দায়েরের বিষয়টি জানতে পেরে লোকমান হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে বেশ কিছু লোকজনসহ বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যাংকের ফৈলজানা শাখায় হামলা চালান। এ সময় অফিসকক্ষ ও টেবিলের গ্লাস ভাঙচুর করা হয় এবং শাখা ব্যবস্থাপক শামসুজ্জামানসহ কয়েকজন কর্মচারীকে মারধর করে আহত করা হয়।
এই ঘটনায় ব্যাংকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, লোকজন দিগন্তর দিকে ছুটতে শুরু করে। পরে স্থানীয়রা এসে শাখা ব্যবস্থাপক শামসুজ্জামানকে উদ্ধার করে আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অন্যান্য আহত কর্মচারীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ডিজিএম হেলাল উদ্দিন জানান, লোকমান হোসেনের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ব্যাংকের শাখায় প্রবেশ করে। আগের একটি কৃষিঋণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক শামসুজ্জামান নয়নের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা হামলা চালিয়ে ম্যানেজার ও অন্যান্য কর্মচারীদের মারধর করে। এছাড়াও ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত লোকমান হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
চাটমোহর উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব ফারুক হোসেন লোকমান হোসেনের দলীয় পদবি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি এবং ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। যদি লোকমান হোসেন অন্যায় করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আইনি সহায়তাও দেওয়া হবে।’
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং মামলার পর পুলিশ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।