আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছে না। তবে ফ্ল্যাট কেনা ও ভবন নির্মাণে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হতে পারে। পাশাপাশি, সোনার আংটি কেনা ও চোখে কর্নিয়া স্থাপনের মতো ক্ষেত্রে যে ৫ শতাংশ হারে কর ছিল, সেটিও তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটটি রোববার (২২ জুন) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন পাবে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট, নির্দিষ্টকরণ অধ্যাদেশ এবং অর্থ অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। এসব প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। এর মধ্যে সম্পূরক বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ অধ্যাদেশের আইনি যাচাই (ভেটিং) ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু অনুমোদনের অপেক্ষা। তবে অর্থ অধ্যাদেশের সংশোধনী অনুমোদনের পর তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর তা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে যাবে। সব প্রক্রিয়া শেষে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই সংশোধিত অর্থ অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ হবে।
সংসদ না থাকায় এবারের বাজেট উপস্থাপন নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। বাজেট পেশের পরদিন, ৩ জুন অর্থ উপদেষ্টা অন্যান্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলেও অনেক বিষয় এড়িয়ে যান উপদেষ্টারা। এ ছাড়া বাজেট নিয়ে জনমত জানাতে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত মতামত দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি কয়েকটি ব্যবসায়ী চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন নিজেদের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে। কেউ কেউ সরাসরি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করার সুযোগও পেয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাজেট বিষয়ে মতামত জানাতে ওয়েবসাইটে আহ্বান জানানো হলেও ১০০টিরও কম প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ মতামতেই সংশ্লিষ্ট বিষয় ভালোভাবে না বোঝার ইঙ্গিত রয়েছে। এসব মতামতের ব্যাখ্যা আজ বা আগামীকাল অর্থ বিভাগ থেকে জানানো হতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ রোববার (২২ জুন) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) অধ্যাদেশ-২০২৫’ উপস্থাপন করবেন। ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরের কার্যক্রম পরিচালনায় সংযুক্ত তহবিল থেকে মঞ্জুরীকৃত অর্থের অতিরিক্ত বরাদ্দ ও নির্দিষ্টকরণের অনুমোদন দিতেই এই অধ্যাদেশ পেশ করা হচ্ছে। সাধারণত সংসদ থাকলে এটি কণ্ঠভোটে পাস হতো, তবে এবার তা পাস হবে উপদেষ্টা পরিষদের সম্মতিতে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য মোট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সম্পূরক বাজেট বিবৃতিতে অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, সংশোধিত বাজেটে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ মোট ১ লাখ ৩০ হাজার ৫১২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে অর্থ বিভাগের বরাদ্দই বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, যা ১ লাখ ৪ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। অন্য ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ কিছু ক্ষেত্রে কমেছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত রয়েছে।