দেশে ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় উদ্যোক্তারা মোটাদাগে আটটি প্রধান সমস্যার মুখোমুখি হন। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মূলধনের সংকট। এছাড়া, সহজে ঋণপ্রাপ্তির জটিলতা, দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব, কাঁচামালের ঘাটতি, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, পণ্য বিপণনের সমস্যা, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকটসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এ এ চিত্র উঠে এসেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ও পরিবারের উদ্যোক্তাদের মতামতের ভিত্তিতে এসব সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। শুমারি অনুসারে, প্রায় ৮৬ শতাংশ উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ মূলধনের অভাব।
উদ্যোক্তাদের মতে, পুঁজির অভাবে অনেকে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারেন না। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ে না। মূলধনের অভাবকে উদ্যোক্তারা বড় সমস্যা হিসেবে মনে করেন।আর ৩৪ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা মনে করেন, সহজে ঋণ পাওয়া যায় না। ছোট ছোট উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সময়ে বলে আসছেন, তাঁরা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ পান না। নানা ধরনের কাগজপত্র বা জামানত লাগে। এতে ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে যায়।অবকাঠামোর অভাবের কথা জানিয়েছেন প্রায় ১৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মালিক। বাকি সমস্যাগুলোর কথা জানিয়েছেন ৫ থেকে ১০ শতাংশ উদ্যোক্তা। তবে একেকজন উদ্যোক্তা একাধিক সমস্যার কথাও জানান।
উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় নানা সমস্যার কথা বলে আসলেও, এখন পর্যন্ত এসব সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। অর্থনৈতিক শুমারি প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, এবারই প্রথমবারের মতো শুমারিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে মাঠপর্যায়ের বাস্তব চিত্র উঠে আসায় নীতিনির্ধারকেরা সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারবেন।
সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত, বাকি প্রতিষ্ঠান শহর এলাকায়। অর্থাৎ, শহরে শ্রমঘন ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাধান্য পেলেও, গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি। এসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে মোট ৩ কোটি সাড়ে ৭ লাখের বেশি মানুষ কর্মরত, যেখানে শহরে কর্মসংস্থান ৪৩ শতাংশ এবং বাকি অংশ গ্রামে।