এবার ঈদের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নকশার ২০, ৫০ ও ১ হাজার টাকার নোট বাজারে এনেছে। তবে নতুন ছাপানো নোটের পরিমাণ এত কম ছিল যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা তা দেখেননি। এই ঈদে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়া হয়েছে, যেখানে আগের ঈদে সাধারণত ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে আসত। নতুন নোটের কম সরবরাহের কারণে অনেক মানুষ এবার নতুন নোট পায়নি।
আগামী শনিবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদের আগে নতুন নোটে সালামি দেওয়ার রীতি অনেকদিন ধরে প্রচলিত রয়েছে। তাই ঈদের আগেই ব্যাংকে নতুন নোটের জন্য ভিড় দেখা যায়। এবারও আগ্রহী গ্রাহকেরা নতুন নোটের জন্য ব্যাংকে ছুটেছেন, কিন্তু খুব কম সংখ্যক মানুষই নতুন নোট পেতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে অনেকের নতুন নোটে ঈদ সালামি দেওয়ার আশা পূরণ হচ্ছে না। তাই এবারের ঈদে সালামির জন্য পুরোনো নোটই ভরসা বা ডিজিটাল মাধ্যমে ঈদ সালামি দেওয়াই বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, বর্তমানে নগদ টাকার ব্যবহার ক্রমশ কমে আসছে। অনেক নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ এখন বেতনের অর্ধেকের বেশি নগদ ব্যবহার করেন না। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাংকের টাকা অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয় এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবা যেমন বিকাশ, নগদ, রকেটের মাধ্যমে দ্রুত লেনদেন করা হয়। তদুপরি, ব্যাংক হিসাবধারীরাও নগদ লেনদেনের চেয়ে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারে বেশি আগ্রহী। এর ফলে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এবং অ্যাপগুলো ডিজিটাল ঈদ সালামির প্রধান মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এইসব মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তিকে যেকোনো সময়েই যেকোনো পরিমাণ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।
শুধু ঈদ নয়, দেশের বড় বড় উৎসবগুলোতেও শুভেচ্ছাবার্তা ও টাকা পাঠানোর সুবিধা চালু করেছে বিকাশ। প্রিয়জনকে উপহার পাঠানো আরও আনন্দময় করতে ২০২১ সালে বিকাশ তাদের অ্যাপে ‘ঈদসালামি’ এবং ‘ঈদ শুভেচ্ছা’ নামে দুটি অপশন যোগ করে। বিকাশ অ্যাপ থেকে যেকোনো নম্বরে টাকা পাঠানোর সময়, প্রথমে ‘আপনার উদ্দেশ্য সিলেক্ট করুন’ ট্যাবটি দেখাবে। সেখানে থেকে ‘ঈদসালামি’ অথবা ‘ঈদ মোবারক’ অপশন থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে পারবেন। এরপর টাকার পরিমাণ লিখে পরবর্তী ধাপে গেলে, রেফারেন্স অংশের নিচে ‘কার্ডের মেসেজ আপডেট করুন’ ট্যাব দেখতে পাবেন। বিকাশ অ্যাপে আগেই সংযুক্ত আছে বিভিন্ন ঈদ শুভেচ্ছার মেসেজ, যেমন ‘ঈদের আনন্দ ঘরে ঘরে, সালামি দিলাম বিকাশ করে’ অথবা ‘এই ঈদ আপনার জীবনে নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি। ঈদ মোবারক’।
গ্রাহকরা চাইলে বিকাশ অ্যাপে থাকা এই দুটি মেসেজই ব্যবহার করতে পারেন অথবা নিজের পছন্দ অনুযায়ী নতুন মেসেজ লিখেও দিতে পারেন। মেসেজ বাংলায় এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় লেখার সুবিধা রয়েছে। স্বাক্ষরের জায়গায় নিজের নাম বা সম্পর্কের পরিচয়, যেমন মা, চাচা, মামা, ভাই, বোন ইত্যাদি উল্লেখ করতে পারবেন। পরবর্তী ধাপে বিকাশ পিন দিয়ে সহজেই শুভেচ্ছা বার্তা এবং টাকা পাঠানো সম্পন্ন হবে। যিনি ঈদসালামি বা শুভেচ্ছা বার্তা পেয়েছেন, তার ডিভাইসের নোটিফিকেশনে একটি গিফট বক্স প্রদর্শিত হবে। সেখানে ক্লিক করলে বিকাশ অ্যাপে ঢুকে সালামির পরিমাণ ও মেসেজ দেখতে পারবেন। এছাড়া রকেট, নগদ ও অন্যান্য মোবাইল সেবার মাধ্যমে যেকোনো পরিমাণ টাকা পাঠিয়ে ডিজিটাল সালামি দেওয়া সম্ভব। ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস পে, ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা, সিটি ব্যাংকের সিটিটাচসহ বেশ কিছু ব্যাংকের জনপ্রিয় অ্যাপ ব্যবহার করেও গ্রাহকরা এবার ডিজিটাল সালামি পাঠাতে পারবেন।