## ৩৮ সেবায় আয়কর প্রাপ্তি স্বীকার বাধ্যতামূলক করায় রিটার্ন বাড়ছে
## প্রতিটি কর অঞ্চলে ই-রিটার্ন, ই-টিআইএন ও এ-চালানের বুথ করা হয়েছে
## জরিপ বক্সে সেবা বাড়ানোর মতামত দিচ্ছেন করদাতারা
বিশেষ প্রতিনিধি: বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাইদুল ইসলাম। দুই বছর আগে ই-টিআইএন নিলেও রিটার্ন দেননি। রিটার্ন কীভাবে তৈরি করতে হয়, সম্পদ কি দেখাতে হবে কিছুই জানেন না। কর অঞ্চল-১৪ এর করদাতা সাইদুল ইসলাম মিনি করমেলার সহায়তা নিয়ে নিজেই রিটার্ন তৈরি করে জমা দিলেন। রিটার্ন তৈরিতে সহায়তায় মুগ্ধ তিনি। বাইরে কর অফিসের হয়রানির অভিযোগকে প্রোপাগান্ডা বলছেন তিনি। একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন কর অঞ্চল-১০ এর করদাতা সুরাইয়া ইসলাম। বললেন, মাত্র কয়েক মিনিটেই রিটার্ন দাখিল করলাম। রিটার্ন তৈরিতে কর্মকর্তারা সহায়তা করেছেন।
শুধু সাইদুল আর সুরাইয়া নয়, প্রতিটি কর অঞ্চলের মিনি করমেলায় সব করদাতা একই সেবা পাচ্ছেন। ১ থেকে ৩০ নভেম্বরকে করসেবা মাস ঘোষণা করেছে এনবিআর। সে হিসাবে জরিমানা ছাড়া আগামী ছয় দিন রিটার্ন দাখিল করা যাবে। শেষ সময়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রতিটি কর অঞ্চলে রিটার্ন দাখিল ও সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কর কর্মকর্তারা।
শুধু মেলায় নয়, অনলাইনে করদাতারা রিটার্ন (ই-রিটার্ন) দাখিল করতে পারছেন। ঝামেলা এড়াতে অনেক করদাতা ই-রিটার্ন দাখিল করছেন। গতকাল পর্যন্ত ই-রিটার্ন দাখিল সংখ্যা এক লাখ ছুঁয়েছে। যাকে এনবিআর মাইলফলক বলছে। তবে চলতি অর্থবছর ৩৮টি সেবা গ্রহণে রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যার ফলে এবার রিটার্ন দাখিল যেকোনো বছরের তুলনায় বেশি হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
কর অঞ্চল-১০, ঢাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেগুনবাগিচায় কর অঞ্চলের নিচে মিনি মেলার আলাদা আলাদা বুথ করা হয়েছে। হেল্প ডেস্ক, রিটার্ন গ্রহণ বুথ, ই-টিআইএন, ই-রিটার্ন, এ-চালানের আলাদা বুথ করা হয়েছে। করদাতারা রিটার্ন তৈরি করে আনলে মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র। মেলায় বসে কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়েও অনেকে রিটার্ন পূরণ করছেন। রাখা হয়েছে সেলফি তোলার স্থান। করদাতাদের টাকায় যে উন্নয়ন হচ্ছে সে উন্নয়ন প্রকল্পের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে সেলফি তোলার জায়গা। অনেক করদাতা মেলাকে স্মরণ করে রাখতে সেখানে সেলফি তুলছেন। সব ধরনের ফর্ম বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।
কর অঞ্চল-১০, ঢাকার উপ কর কমিশনার (সদর দপ্তর) মোহাম্মদ আবু মুসা বলেন, বুথ থেকে সব ধরনের করসেবা দেয়া হচ্ছে। শেষ সময়ে ভিড় বেশি হচ্ছে। কমিশনার মহোদয়সহ সব কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
কর অঞ্চল-১৪, ঢাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিজয়নগরে আত-ত্বরীক টাওয়ারের ভেতরে (নিচে) আলাদা বুথ করা হয়েছে। তবে স্থান সংকুলান না হওয়ায় টাওয়ারের সামনে সড়কের এক পাশে আলাদা কয়েকটি বুথ করা হয়েছে। এসব বুথ থেকে করদাতাদের সেবা দেয়া হচ্ছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় রাখা হয়েছে এলিট ফোর্সের নিরাপত্তা কর্মীদের। ই-টিআইএন, ই-রিটার্ন ও এ-চালানের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা বুথ। করদাতা সন্তুষ্টি জরিপে রাখা হয়েছে বুথ। নাসিম উদ্দিন নামের একজন করদাতা বলেন, ১০ বছর ধরে রিটার্ন জমা দেয়। প্রতি বছর রিটার্ন দেয়ার ধরন পাল্টে যাচ্ছে, সেবা সহজ করা হচ্ছে। এবার মাত্র ৫ মিনিটে রিটার্ন জমা দিলাম। সন্তুষ্টি ফরমে সেবাকে আরও সহজ করার বিষয়ে আমি মতামত দিয়েছি।
কর অঞ্চল-১৪, ঢাকার উপ কর কমিশনার (সদর দপ্তর) মো. আল আমিন বলেন, ২০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার রিটার্ন দাখিল, প্রায় ৫০ কোটি টাকার কর আদায় ও দেড় হাজার করদাতাকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। ই-রিটার্ন দাখিল হয়েছে এক হাজার ২৪১টি। ১০টি বুথ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
কর অঞ্চল-১৫, ঢাকা ঘুরে দেখা গেছে, নয়াপল্টনে কর অঞ্চল-১৫ এর নিচে অভ্যর্থনা ডেস্ক করা হয়েছে। স্থান সংকুলান নিচে কোনো বুথ রাখা হয়নি। কোন সার্কেল কোন ফ্লোরে, কোন ফ্লোরে কী সেবা পাওয়া যাবে-তা অভ্যর্থনা ডেস্ক থেকে বলে দেয়া হচ্ছে। তথ্য সেবা মাস উপলক্ষে প্রতিটি বুথ সাজানো হয়েছে। করের টাকায় করা দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দিয়ে ব্যানার, ফেস্টুনে স্থান পেয়েছে। ভবনের প্রবেশ মুখেই করদাতা সন্তুষ্টি জরিপের বক্স রাখা হয়েছে।
আশিকুর রহমান নামের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছর রিটার্ন দেয়। এবার অনেক দ্রুত রিটার্ন জমা দিতে পেরেছি। কর্মকর্তারা বেশ আন্তরিক। কর অঞ্চল-১৫ এর কমিশনার এ কে এম হাসানুজ্জামান বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। রিটার্ন জমার জন্য করদাতাকে দাঁড়াতে হচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব রিটার্ন প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেয়া হচ্ছে।
কর অঞ্চল-১২ ঘুরে দেখা গেছে, রিটার্ন পূরণে কর্মকর্তারা সহায়তায় করছে। দুই থেকে তিন মিনিটেই রিটার্ন জমা দিতে পারছেন করদাতারা। বুথগুলো সাজানো হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পের ছবি দিয়ে। হেল্প ডেস্ক থেকে সব ধরনের সেবা পাচ্ছেন করদাতারা। রিটার্ন গ্রহণ বুথ ছাড়াও সিনিয়র সিটিজেন আর প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় আলাদা বুথ রাখা হয়েছে। কর অঞ্চল-১২ এর কমিশনার মোহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন, সেবা নির্বিঘ্ন করতে আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। রিটার্ন গ্রহণে এখন পর্যন্ত ঢাকার মধ্যে আমাদের অবস্থান ভালো।
সেগুনবাগিচায় কর অঞ্চল-৭ ও কর অঞ্চল-১১ ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের নিচতলায় আলাদা বুথ করা হয়েছে। এ-চালান, ই-টিআইএন ও ই-রিটার্ন সেবার জন্য রাখা হয়েছে আলাদা বুথ। কয়েকজন করদাতা জানিয়েছেন, ভিড় থাকলেও রিটার্ন জমায় বেশি সময় লাগে না। যেকোনো বুথে যেকোনো সার্কেলের রিটার্ন জমা দেয়া যাচ্ছে। হয়রানি এড়াতে কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন।
অপরদিকে, ১ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রিটার্ন দাখিল ও সাড়ে তিনশ কোটি টাকার কর আদায় হয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ই-রিটার্ন দাখিল এক লাখের মাইলফলক ছুঁয়েছে। এ উপলক্ষে বুধবার এনবিআর সম্মেলন কক্ষে কেক কেটে এ মাইলফলকের ক্ষণ উদযাপন করা হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম কেক কাটেন। এ সময় এনবিআরের আয়কর বিভাগের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইনে এক লাখ করদাতা ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন, এটি এনবিআরের জন্য একটি মাইলফলক উল্লেখ একজন কর্মকর্তা বলেন, এক লাখ করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন, এটা বড় কোনো বিষয় নয়। বড় এবং গর্বের বিষয় হলো এক লাখ করদাতা ই-রিটার্ন সিস্টেমকে সহজ পদ্ধতি মনে করে আইন মেনে রিটার্ন দাখিল করেছেন। অর্থাৎ করদাতারা এতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। ই-রিটার্ন পদ্ধতি আরও সহজ করতে আমরা কাজ করছি।