ই–বাইক বা বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল উৎপাদন শিল্পে শুল্ক ও কর সংক্রান্ত কিছু শর্ত শিথিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বামা)। এ বিষয়ে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ একটি চিঠিও দিয়েছে সংগঠনটি।
বামার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী দ্বীনের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিবেশবান্ধব যানবাহন তৈরিতে সরকারের সহায়তা থাকা সত্ত্বেও ই–বাইক শিল্পে বাস্তব অগ্রগতি থমকে আছে কিছু জটিল শর্তের কারণে। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসআরওর মাধ্যমে এই খাতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হলেও, তা পাওয়ার জন্য ১৪টি শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা শিল্প বিকাশের পথে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ই–বাইক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, এ শিল্প বাংলাদেশে মূলত ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বা পশ্চাৎ সংযোগ নির্ভর—অর্থাৎ, যন্ত্রাংশের জন্য তারা একাধিক জোগানদাতা ও উৎপাদকের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এনবিআরের নতুন এসআরওতে এমন কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন এই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে ই–বাইক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব কারখানায় ‘মেটাল হাউজিং’ বা চেসিসসহ বিভিন্ন ধাতব যন্ত্রাংশ তৈরির বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে, যা করতে বড় বিনিয়োগ ও আলাদা দক্ষতা প্রয়োজন। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘মেটাল হাউজিং’ সাধারণত ব্যাটারির একটি অংশ হলেও প্রজ্ঞাপনে এমনভাবে বলা হয়েছে, যেন ই–বাইক প্রস্তুতকারকদের নিজস্ব ব্যাটারি তৈরি করতেই হবে। অথচ সরকার ব্যাটারি উৎপাদনে আলাদাভাবে উৎসাহ দিয়ে আসছে। এই অবস্থায় বাইক প্রস্তুতকারকদের ব্যাটারি তৈরিতে বাধ্য করলে ব্যাটারি–ভিত্তিক অন্য উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ, তখন বাইক প্রস্তুতকারকেরা বাইরের সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ব্যাটারি কিনবেন না।
ব্যবসায়ীদের মতে, এনবিআরের শর্ত অনুযায়ী ই–বাইক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের কারখানায় প্লাস্টিক হাউজিং বা কেসিং তৈরির জন্য ইনজেকশন মোল্ডিং মেশিন, ড্রায়ার, গ্রাইন্ডার, পেইন্ট বুথসহ নানা যন্ত্রপাতি বসাতে হবে। অথচ এই কেসিং মূলত ব্যাটারির অংশ, যা বাইক প্রস্তুতকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তাদের দিয়ে এটি তৈরি করাতে গেলে তা হবে ব্যয়বহুল, লাভজনকও নয়। বরং এতে ব্যাটারিভিত্তিক অন্যান্য শিল্পক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রজ্ঞাপনের এক ধারায় ই–বাইক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে নিজ কারখানায় প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড (পিসিবি) তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসানোর শর্ত দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁদের মতে, পিসিবি সাধারণত মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ই–বাইক শিল্পের জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা যৌক্তিক নয়।
এনবিআরকে লেখা চিঠিতে বামা জানিয়েছে, উল্লেখিত শর্তগুলো শিথিল না করলে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল শিল্পে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন এবং খাতের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২ অনুযায়ী শর্তসমূহ পর্যালোচনা করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি করেছে তারা। অন্যথায় পরিবেশবান্ধব যানবাহনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হবে।