ই-টিআইএন নিবন্ধনে কোটির মাইলফলক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: অবশেষে ই-টিআইএন নিবন্ধন (ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর) এক কোটি ছাড়িয়েছে।  বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এক কোটি পার হয়ে যায়। যদিও আয়কর রিটার্ন দাখিল অর্ধ-কোটির ঘর পার হয়নি। তবে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, এনবিআরের নেয়া পদক্ষেপে নিবন্ধনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রিটার্ন দাখিলও বাড়তেছে। এক কোটি ই-টিআইএন এর মধ্যে প্রায় ২৮ লাখ অকেজো ই-টিআইএন রয়েছে।

এনবিআরের তথ্যমতে, ২০১৩ সালে অনলাইনে ই-টিআইএন পদ্ধতি চালু করে এনবিআর। এ ব্যবস্থায় যে কেউ ইচ্ছা করলে ঘরে বসে ই-টিআইএন নিতে পারেন। কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা না দিলও চলে। এর জন্য নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও এনআইডি দিয়ে নিবন্ধিত একটি মোবাইল নাম্বার হলেই চলে। এনবিআরের ওয়েবসাইটে ঢুকে ক্লিক করে ১২ ডিজিটের ই-টিআইএন সংগ্রহ করা যায়।

সম্প্রতি প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, চার বছরের ব্যবধানে দেশে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। ২০২০ সালে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ছিল ২১ লাখ, ২০২৪ সালে (আগামী জুন নাগাদ) এটি ৪০ লাখে উন্নীত হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ চার বছরে রিটার্ন জমা দ্বিগুণ বাড়ছে।

দেশে বর্তমানে ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা এক কোটি পার হয়েছে। আয়কর আইন অনুযায়ী, প্রায় সব টিআইএনধারীকে রিটার্ন জমা দিতে হয়। সেই বিবেচনায় রিটার্ন জমায় বড় পার্থক্য রয়ে গেছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেকে ওয়ান-টাইম টিআইএন নিয়েছেন (জমি ক্রয়, বিক্রয় বা ছোট প্রয়োজনে এনবিআরের নিয়মের কারণে)। এই সংখ্যা বিশাল। আমরা ঠিক করতে পারিনি এই টিআইএন থেকে ফেজ আউট করা যায় কীভাবে।’

অর্থবছরের শেষে নভেম্বরের মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এ বছর নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে এনবিআর জরিমানা ছাড়া এই সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করে। এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রিটার্ন দাখিলের পরিমাণ ছিল ৩৬ লাখ ৮১ হাজার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৫ লাখ ১৮ হাজার রিটার্ন অনলাইনে দাখিল হয়েছে। আগামী জুন নাগাদ তা ৪০ লাখে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এনবিআর সূত্রমতে, ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বর্তমান ই-টিআইএনকে বলা হতো জিআইআর (জেনারেল ইনডেক্স রেজিস্ট্রেশন)। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রেজিস্টার বইয়ে করদাতার নাম ও তথ্য নিবন্ধন করা হতো। এতে যে নাম্বার পড়ত সেটাই হতো করদাতার নম্বর। কোনো কারণে করদাতা ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে গেলে যাচাই করে সেই নম্বর বন্ধ করে দেয়া হতো। ১৯৯৩ সালে টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) চালু করা হয়। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ই-টিআইএন (ইলেকট্রনিক ট্যাক্সপেয়ার’স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) চালু করা হয়। এরপর থেকে ইনঅ্যাক্টিভ টিআইএন আর নিষ্ক্রিয় বা বাতিল করা হচ্ছে না।

সূত্র আরও জানায়, সচল ই-টিআইএন ও রিটার্ন এবং নিষ্ক্রিয় বা অকেজো ই-টিআইএন ও কর ফাইল জানতে কর অঞ্চলগুলোকে চিঠি দেয় এনবিআর। কর অঞ্চলগুলো নিবন্ধিত করদাতা, চালু নথি ও নথিস্থ মামলার সংখ্যা এনবিআর পাঠায়। ২০২২ সালে কর অঞ্চলগুলোর হিসাব অনুযায়ী, নিষ্ক্রিয় বা ইনঅ্যাক্টিভ ই-টিআইএন বা কর ফাইলের সংখ্যা দাঁড়িয়ে প্রায় ২৭ লাখ। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা ২৯ লাখ ছাড়িয়েছে। ই-টিআইএনধারী বা নিষ্ক্রিয় এসব করদাতা হয়তো বিদেশ চলে গেছেন, কেউ মারা গেছেন। আবার কেউ কোনো প্রয়োজনে ই-টিআইএন নিয়ে আর রিটার্ন দাখিল করেনি। কিন্তু এসব ই-টিআইএন বা কর ফাইল বন্ধ করা হয়নি। চলতি বাজেটে ই-টিআইএন বাতিলের বিধান যুক্ত করেছে এনবিআর।

***

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!