ইসরায়েলের ওপর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩’ নামে পরিচালিত এই অভিযানে ইসরায়েলের একাধিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়। এতে এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত ও অন্তত ৬৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে আহতদের মধ্যে এক নারী হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া চতুর্থ দফার হামলায় মধ্য ইসরায়েলের তেল আবিবের দক্ষিণে আরও একজন নিহত হয়েছেন। একইদিন তেল আবিবের পূর্বাঞ্চলে ইরানি হামলার সময় অস্ত্রের খণ্ডাংশ পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়। হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইরান থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক মিসাইল ইসরায়েলের সামরিক সদর দপ্তর ‘কিরিয়াত’-এ সরাসরি আঘাত হানে, যা দেশটির জন্য ‘পেন্টাগন’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ফক্স নিউজের প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা ট্রে ইংস্ট তেল আবিব থেকে সরাসরি সম্প্রচারে জানান, কিরিয়াত কম্পাউন্ডের একটি ভবন সরাসরি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ইরানেও ধারাবাহিকভাবে নতুন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ইসফাহান শহরে ইসরায়েলের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে সক্রিয় রয়েছে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এছাড়া, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান উত্তরাঞ্চলীয় শহর জানজানে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটিতে বোমা হামলা চালিয়েছে। রাজধানী তেহরান থেকে শহরটি প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার দূরে। হামলার ঘণ্টাখানেক পরও ঘটনাস্থলে ঘন ধোঁয়ার কুন্ডলি ও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে—ভিডিও ফুটেজে এমনটাই দেখা যায়।
এছাড়া, ইরানি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, তেহরানের পূর্বাঞ্চলের হাকিমিয়েহ ও তেহরানপারস এলাকায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। এর আগে মেহরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় সেখানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
গতকাল ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে ইরানের বিভিন্ন শহর, সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে অন্তত ৭৮ জনকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে ছয়জন পরমাণুবিজ্ঞানী ও একাধিক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ৩২০ জনের বেশি। এ ঘটনার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এই হামলার জবাবে ইসরায়েলকে ‘চরম শাস্তির’ জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তাদের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ যত দিন প্রয়োজন হবে, তত দিন চালিয়ে যাওয়া হবে। একই দিনে ইরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো তাদের হামলার আওতায় রয়েছে এবং প্রয়োজনে সেখানে আঘাত হানা হতে পারে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো এক চিঠিতে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন জানায়, ইসরায়েলের ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে এই সংঘাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পূর্ণভাবে দায় নিতে হবে।
ইরানের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
শুক্রবার মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইরানের পাল্টা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহতে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের জবাবে ছোড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ভূপাতিত করা হয়। পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন সেনা ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম পুনর্বিন্যাস করেছে পেন্টাগন। এ লক্ষ্যে, মার্কিন নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস টমাস হান্ডারকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আরেকটি যুদ্ধজাহাজ সেখানে যোগ দেবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান মোতায়েন করতে পারে। কর্মকর্তারা আরও জানান, সেখানে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে আকাশপথে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান নিয়মিত টহল দিচ্ছে।
শুক্রবার ইসরায়েল ইঙ্গিত দেয়, তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও সর্বাধিক সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনা—ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এদিকে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেন, যদি ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা চালায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত ও সরাসরি জবাব দেবে।