কর্মকর্তারা ইন্সপেক্টর-সুপারিনটেনডেন্ট পদবি ফেরত চান

ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট কাস্টমসের আদি পদ। মাঠ পর্যায়ে পাঁচ হাজারের অধিক ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট কর্মরত রয়েছে। রাষ্ট্রের আয়ের কিয়দংশ ছাড়া প্রায় পুরোটার যোগানদাতা ‘এনবিআর’। যার দুই-তৃতীয়াংশ কাস্টমস ও ভ্যাটের মাঠ পর্যায়ের এই পাঁচ হাজারেরর অধিক ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্টদের মাধ্যমেই আহরিত হয়। অথচ আজ থেকে ১৫ বছর আগে বাজেটে তাদের মতামত উপেক্ষা করে ইন্সপেক্টর পদকে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) এবং সুপারিনটেনডেন্ট পদকে রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) নামকরণ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা তাদের পুরনো ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট পদ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর বাজেট থেকে ফিরে পেতে চান। রোববার (৪ মে) দুপুরে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের কাছে এসব দাবি নিয়ে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাকাএভ) নেতারা। এসময় বাকাএভ এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারম্যান বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১০-১১ অর্থবছর বাজেটে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করে ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট পদবি পরিবর্তন করে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) এবং রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) করা হয়। পদ হারানোর পর থেকে কর্মকর্তা পুরনো পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সব ফোরামে দাবি উত্থাপন করতে থাকেন। পাঁচ হাজারের অধিক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের সংগঠন বাকাএভ এর মাধ্যমে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পুরনো পদ পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছে। এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) ড. আব্দুর রউফ এর ইউ নোট এবং বাকাএভ এর লিখিত দাবি আমলে নিয়ে এখন ফাইল এনবিআর সদস্য (শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন) এর কাছে রয়েছে। আজ সংগঠনের প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এর কাছে তাদের দাবি উপস্থাপন করেন। চেয়ারম্যান আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন।

অপরদিকে, চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজস্ব হলো রাষ্ট্রের অক্সিজেন। আমরা রাজস্ব আহরণ নিশ্চিতকল্পে আইন-বিধির প্রয়োগে বিভিন্ন মহলের বাধা বিপত্তি পেরিয়ে, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা ভাতা, রেশন, ঝুঁকিভাতা, আবাসন, যানবাহন, বদলি নীতিমালা, প্রশিক্ষণ, উচ্চশিক্ষা, ক্যারিয়ার প্ল্যানিংসহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে কোন লজিস্টিক সাপোর্ট ছাড়াই নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা বদ্ধপরিকর। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আমাদের প্রাণের দাবি ‘ইন্সপেক্টর’ ও ‘সুপারিনটেনডেন্ট’ পদবি পুনর্বহাল করে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আত্মমর্যাদার ভিত রচনায় ও আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধারে ভূমিকা নেয়া জরুরি। উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট পদবি কাস্টমসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গৌরব ও ঐতিহ্য বহন করে। কাস্টমসের ঐতিহ্য যা আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত তাছাড়া পদবি পুনর্বহালে সরকারের কোন আর্থিক সংশ্লেষ নেই।

আরও বলা হয়েছে, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় বা দপ্তরের সম্মতি রয়েছে। এছাড়াও স্থলবন্দরসমূহের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভূটান, মিয়ানমারসহ প্রতিবেশি দেশসমূহের সীমান্তে কাস্টমসের ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্টদের সাথে কাজের সমন্বয়ে এমনকি সমুদ্রগামী জাহাজে কিংবা বিমান বন্দরে রামেজিং কার্যক্রমেও আমাদের কর্মকর্তারা পরিচয় দিতে গিয়ে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস অনুভব করেন। কারণ বিদেশি জাহাজের ক্যাপ্টেন কিংবা বিমানের পাইলট সবার কাছেই ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট পদবি বহুল পরিচিত। মাঠ পর্যায়ের রাজস্ব আহরণকারী কর্মকর্তাদের মনোবল দৃঢ় করার মাধ্যমে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ইন্সপেক্টর-সুপারিনটেনডেন্ট পদবি পুনর্বহাল করতে চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!