ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি নির্ভরতা আরও বেড়েছে

বিশ্বের ১৯৫টি দেশের প্রায় সবখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হলেও ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি নির্ভরতা কমেনি, বরং তা বাড়ছেই। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে পোশাক রপ্তানিতে ইউরোপ এবং আমেরিকার নির্ভরতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও নতুন বাজারগুলোর মধ্যে কিছু সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত সীমিতই রয়ে গেছে, এবং এসব বাজারে রপ্তানির শেয়ার আরও কমেছে।

বাণিজ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউরোপ এবং আমেরিকার প্রতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির নির্ভরতা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। টেরিটাওয়েল, হোমটেক্সটাইলসহ অন্যান্য সমজাতীয় পণ্য হিসেবেও তৈরি পোশাকের অংশ এখন ৮৭ শতাংশ, যার মানে বাকি পণ্য রপ্তানি থেকে আয় আসে মাত্র ১৩ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে হারমোনাইজ সিস্টেম (এইচএস) ৬ ডিজিট কোডিং অনুযায়ী ২০০ ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ২০২০ সালে ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যও প্রচলিত বাজার হিসেবে গণ্য হয়, আর বাকি সব দেশকে অপ্রচলিত বা নতুন বাজার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (বিএফটিইউ) সাবেক পরিচালক এবং বাণিজ্য বিশ্লেষক ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, বাংলাদেশ বেশি উৎপাদন করে, এমন পণ্যের চাহিদা যেসব দেশে বেশি, সেখানে রপ্তানি বাড়ছে। ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি বেড়ে চলার এটা প্রধান কারণ। এ ছাড়া সাম্প্রতিক চীনের শুল্ক বিরোধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির রপ্তানি কমছে। নতুন প্রশাসন চীনা পণ্যে শুল্কারোপের ঘোষণা আগেই দিয়েছে। এর পর থেকেই চীনা পণ্যে মার্কিন ক্রেতাদের আগ্রহ কমতে শুরু করে, যার বড় সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত সাত মাসে ২৭ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩.৯১ শতাংশ। রপ্তানির মোট পরিমাণ ১ হাজার ১৮১ কোটি ডলারের বেশি, যার ফলে বিশ্ববাজারে দেশের রপ্তানি আয়ে ইইউর হিস্যা দাঁড়িয়েছে ৫০.১৫ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৯.৩১ শতাংশ।

গত সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১৬.৪৫ শতাংশ বেড়েছে, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দেশের হিস্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৯৯ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৮.২৭ শতাংশ। এই সময়কালে ৪৪৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে। কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে ১৫.২৯ শতাংশ, যার ফলে কানাডার রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ৩.১৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আগের বছর ছিল ৩.১০ শতাংশ। তবে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি কিছুটা কমে এসেছে, সেখানে হিস্যা দাঁড়িয়েছে ১০.৮৩ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১.৬০ শতাংশ।

প্রচলিত বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি পেলেও অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ৬.৪২ শতাংশ, যার ফলে এসব দেশের জন্য বাংলাদেশের মোট রপ্তানি হিস্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.৮৪ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৭.৭২ শতাংশ। গত সাত মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৩৯৭ কোটি ডলার।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ ভূরাজনৈতিক কারণে সেখানে নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে পশ্চাত্ সংযোগ শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রয়োজন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!