আশ্রয়ণের ঘর নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য!

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।নিজের জমি ও বাড়ি আছে এমন কিছু সচ্ছল ব্যক্তি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পাওয়ায় এসব ঘরে বসবাস না করে তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। কিছু ঘর বিক্রি হয়েছে একাধিকবারও। আবার কেউ ভাড়া দিয়ে রাখছেন অন্য পরিবারের কাছে।

সম্প্রতি উপজেলার চরকাদিরা ও হাজিরহাট ইউনিয়নের কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। একই চিত্র অন্যান্য ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পেও।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি ধাপে উপজেলার চরকাদিরা, হাজিরহাট, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ, চরকালকিনি ও চরমার্টিন ইউনিয়নে ৮২০টি ঘর নির্মাণ করে উপজেলা প্রশাসন। নির্মাণকাজের মধ্যেই ঘর বরাদ্দের জন্য ভূমি ও গৃহহীনদের আবেদনপত্র নেওয়া হয়। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ধাপে ধাপে তাদের মাঝে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিজের জমি ও বাড়ি আছে এমন অনেক সচ্ছল ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। অন্যদিকে টাকা দিতে না পারায় অনেক গৃহহীন পরিবার ঘর বরাদ্দ পাননি। যে কারণে, এসব সচ্ছল ব্যক্তি ঘর পাওয়ার পর সেখানে বসবাস না করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বসবাসের জায়গা না থাকায় গৃহহীন পরিবারগুলো ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে আশ্রয়ণের ঘর কিনে নিচ্ছেন।কেউ কেউ মাসে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। ঘর বরাদ্দের সময় যথাযথ যাচাই-বাছাই এবং অবৈধ লেনদেন না হলে প্রকৃত গৃহহীনরাই আশ্রয়ণের ঘরগুলো পেতেন বলে মনে করছেন তারা।

উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরঠিকা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর কিনে বসবাসকারী দু’জন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই আশ্রয়ণে মোট ১৮টি ঘর বিক্রি হয়ে গেছে। ২৪৮ নম্বর ঘরটিতে মাইমুনা বেগম বসবাস করছেন। তিনি শিরীন বেগমের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকায় কিনেছেন। ১৯৪ নম্বর ঘরটি ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে আবদুল মান্নানের কাছ থেকে আব্দুল হান্নান কিনেছেন।

১৭৭ নম্বর ঘরটি ফাতেমার নামে থাকলেও তা কিনে বসবাস করেন তাঁর আরেক আত্মীয়। ১৭৫ নম্বর ঘরটি সেলিম স্বর্ণকারের নামে হলেও ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কিনে তাঁর ভাতিজা আনোয়ার বসবাস করছেন। ১৭৪ নম্বর ঘরটি কুলসুম-মাকসুদ দম্পতি বিক্রি করেছেন ইসমাইলের কাছে। ১৭১ নম্বর ঘরটি ৭৫ হাজার টাকায় কিনেছেন নুরে আলম। ৩১৫ নম্বর ঘরটি রহিমা বেগমের নামে বরাদ্দ হলেও ঘরটি কিনে পরিবার নিয়ে থাকেন মনির হোসেন। এ ছাড়া ৩১৭ নম্বর ঘরটিতে মাসে ৮০০ টাকায় ভাড়া থাকেন লিংকন নামের আরেক পরিবার।২৪৮ নম্বর ঘর বিক্রি করা শিরীন বেগম ও ৩১৫ নম্বর ঘর বিক্রি করা রহিমা বেগম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থাকলে তাদের বাড়িঘর দেখাশোনা করবে কে! তাই তারা সরকারি ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। সরকারি ঘর বিক্রি করার বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।

চরঠিকা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি আবুল খায়েরের স্ত্রী সুমি বেগম জানান, ৫৫টি ঘরের মধ্যে ১৮টি ঘর বিক্রি হয়ে গেছে। এমন চিত্র উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতেও।

ঘর বরাদ্দে অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের যাচাই-বাছাই করার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের টাস্কফোর্স নামে একটি কমিটি ছিল। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন ইউএনও এবং সদস্য সচিব ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তাদের দেওয়া তালিকা অনুয়ায়ী তারা ভূমি ও ঘর বন্দোবস্ত নথি রুজু করে ইউএনওর কাছে পাঠান। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তারা জানেন না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) পরিতোষ কুমার বিশ্বাস বলেন, আশ্রয়ণের ঘরগুলো নির্মাণের দায়িত্ব ছিল তাদের। কিন্তু তালিকা যাচাই-বাছাই করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউএনও। তারাই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে, কমলনগরের ইউএনও রাহাত উজ জামান বলেন, তিনি এখানে নতুন যোগদান করেছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে এগুলো শুনছেন। পরিদর্শন করে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!