কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যাগ্রো লিমিটেড। রিসোর্টটির মালিক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আলোচিত সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। এই রিসোর্ট তৈরিতে হারুন ও তার পরিবারের সদস্যদের করফাঁকি খতিয়ে দেখতে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সিআইসির পরিচালক মিজ চাঁদ সুলতানা চৌধুরানীর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের টিম এই অভিযান পরিচালনা করেন। ৪০ একর জমির ওপর নির্মিত রিসোর্টে অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের নথি, আয়-ব্যয়ের হিসাবপত্র ও কম্পিটারের হার্ডডিস্কসহ যাবতীয় নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, এনবিআর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আজ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানকালে প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের প্রকৃত বিনিয়োগ ও আয়-ব্যয়ের হিসাবে গড়মিল পাওয়া গেছে। কাগজপত্রে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদের মালিকানা না থাকলেও প্রকৃত মালিক তিনি। যদিও রিসোর্টটি তার ভাই ও স্ত্রী পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযানকালে কর্মচারীদের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। আপাতত কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করার পর প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে।
সিআইসি সূত্রমতে, এর আগে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের মহাপরিচালক আহসান হাবিব সই করা এক আদেশে অভিযান পরিচালনা করতে ৮ সদস্যের টিম গঠন করা হয়। তাদের কর নথিতে এ–সংক্রান্ত বিনিয়োগ কতটা দেখানো হয়েছে এবং কত কর দেওয়া হয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখছে এই দল। প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট একটি বিলাসবহুল অবকাশ কেন্দ্র, যেখানে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিআইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব বিনিয়োগের কতটা হারুন অর রশীদ অথবা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কর নথিতে দেখানো হয়েছে, যা তারা খতিয়ে দেখবেন। এর আগে গত অক্টোবরে সিআইসি থেকে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সিআইসি একই সঙ্গে ডিবি হারুন হিসেবে বেশি পরিচিত এই কর্মকর্তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে। তারা হলেন-স্ত্রী শিরিন আক্তার, মা জহুরা খাতুন, ভাই এ বি এম শাহরিয়ার ও জিয়াউর রহমান; শ্বশুর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও আত্মীয় সমরাজ মিয়া।
সিআইসির কর্মকর্তারা জানান, কর ফাঁকি ধরা পড়লে হারুন ও তার পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়দের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে।
অপরদিকে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৮ আগস্ট আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরের দিন ১৯ আগস্ট সংস্থাটির উপপরিচালক জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। টিম ইতোমধ্যে মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, তার মা ও প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যাগ্রো লিমিটেডের চেয়ারম্যান জহুরা খাতুন, ভাই ও এমডি এবিএম শাহরিয়ার, তার শ্বশুর আওয়ামী লীগ নেতা সোলায়মান মিয়া, চাচা ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ, মো. মতিউর রহমান, খালা মোছা. মিনারা বেগম, মামা মো. সুমরাজ মিয়া, ব্যবসায়িক অংশীদার মো. আলাউদ্দিন আল সোহেল, রাকিব উদ্দিন দেওয়ান রতন, চাচাতো ভাই আল রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে। যদিও তারা কেউই হাজির হয়নি।
দুদকের অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের স্ত্রী শিরিন আক্তার প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট এন্ড অ্যাগ্রো লিমিটেডের মালিকানা ও তার ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি টাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ওই ঋণ হিসাবে দেখালেও কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ঋণ দিয়ে সে বিষয়ে আয়কর ফাইলে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। অভিযোগ আছে, বিগত সরকারের সময় প্রভাবশালী পুলিশের এই কর্মকর্তা রাজধানীতে দুই ডজন বাড়ি, অধর্ধশতাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও জেদ্দাসহ বিদেশেও গড়েছেন অঢেল সম্পদ। অভিযোগ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংক, সাব রেজিস্ট্রি, পাসপোর্ট, নির্বাচন কমিশনসহ অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়।
ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, জিম্মি করে অর্থ আদায়, মারধর, জমি দখল, বাড়ি দখল, প্লট দখল, ফ্ল্যাট দখল, গুম, খুন, হত্যা, অর্থ পাচার, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, আটকে রেখে নির্যাতন, নিয়োগ বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গড়েছেন ডিবির সাবেক প্রধান হারুন।