** প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব পেয়েছেন কর্মতর্তা-কর্মচারীরা
** আলোচনায় রাজি, আগামীকাল ঐক্য পরিষদের ১০-১২ জনের প্রতিনিধি দল অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাবেন
** অর্থ উপদেষ্টাসহ একাধিক উপদেষ্টা আলোচনা সভায় থাকবেন
** অধ্যাদেশ বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে অনড় ঐক্য পরিষদ
** আলোচনা ব্যর্থ হলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে ঐক্য পরিষদ
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় সমস্যা সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব পেয়েছে “এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ”। আর আলোচনায় রাজিও হয়েছেন সংগঠনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে আলোচনা শেষ হওয়া পর্যন্ত কলম বিরতি কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার (১৯ মে) আগারগাঁও এনবিআরের নিচে ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। উল্লেখ, এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে আজও (১৯ মে সোমবার) এনবিআর ও এনবিআরের অধীনস্থ সকল কাস্টম হাউজ, শুল্ক স্টেশন, ভ্যাট কমিশনারেট ও কর অঞ্চলে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কলম বিরতি পালিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে উপ কমিশনার ইমাম গাজ্জালী বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সানুগ্রহ নির্দেশনায় সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আলোচনার প্রস্তাব পেয়েছি। আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টামন্ডলীর কয়েকজন সদস্য অংশ নেবেন বলে আমরা জেনেছি।”
তিনি বলেন, “আমরা বরাবরই বলেছি, আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আমাদের একটি প্রতিনিধিদল সে আলোচনায় অংশ নেবেন। তবে প্রতিনিধিদলে ১০-১২ জন থাকবেন। নাম এখনো ঠিক হয়নি। এই আলোচনার প্রেক্ষিতে ঐক্য পরিষদের কর্মসূচি আগামীকাল মঙ্গলবার সাময়িক বিরতি থাকবে। আলোচনার অগ্রগতির ভিত্তিতে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা কো হবে।”
ইমাম গাজ্জালী বলেন, ‘এই আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে ট্যাগিং দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই আন্দোলন পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের সৃষ্টি-এই ধরনের গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টাও আমরা দেখছি। এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার এমন বানোয়াট ও অসত্য প্রচারণা আপনারা বিগত কয়েকদিনে প্রত্যক্ষ করেছেন। আমরা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই, এই আন্দোলন সবার, সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর। এই আন্দোলন স্বতস্ফূর্ত। এ ধরনের মিথ্যা ট্যাগিং দিয়ে বা গুজব ছড়িয়ে এই যৌক্তিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করা যাবে না। বরং এই ধরনের মিথ্যাচার আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে। যারা অসত্য ও বিকৃত তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলকে বিভ্রান্ত করছেন, সময়ই বলে দিবে তাদের এই অপপ্রচার কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এই সমাজ ও রাষ্ট্রকে।’
ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে উপকর কমিশনার সাইফুর রহমান বলেন, এনবিআর বিলুপ্ত করে প্রণীত রাজস্ব অধ্যাদেশ বাতিল এবং টেকসই রাজস্ব সংস্কারের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে আজ সোমবার পঞ্চম দিনের মতো সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ছয় ঘন্টা কাস্টমস, ভ্যাট ও ট্যাক্স বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে এবং এনবিআরে স্বতস্ফূর্তভাবে কলম বিরতি পালন করা হয়েছে। এতে সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেছেন। দেশের স্বার্থে রাজস্ব ব্যবস্থার যুগোপযোগী ও টেকসই সংস্কারের কেবল এনবিআরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি নয়; বরং করদাতা সমাজ, ব্যবসায়ী সমাজ, সিভিল সোসাইটিসহ সকল অংশীজনের দাবি। গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মতামত গ্রহণ না করে, সরকার কর্তৃক গঠিত সংস্কার কমিটির সুপারিশ প্রকাশ না করে এবং তা আলোচনা-পর্যালোচনার সুযোগ না দিয়ে, সবাইকে অন্ধকারে রেখে নজিরবিহীন দ্রুততা ও গোপনীয়তার সাথে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অংশীজনদের মতামত গ্রহণ না করে এক তরফাভাবে গৃহীত এই সংস্কারের উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক নেতারা ব্যবসায়ীমহল, পলিসি থিংক-ট্যাংকসহ বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের নামে একশ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান এনবিআরকে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই। যেখানে দেশের রাজস্ব এজেন্সিকে সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সেখানে এটিকে বিলুপ্ত করে রাজস্ব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আন্তর্জাতিক রীতিনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এনবিআর বিলুপ্ত নয়, বরং এনবিআরকে স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী এজেন্সি হিসেবে রেখেই রাজস্ব সংস্কার করতে হবে। আমরা সবসময়ই বলে আসছি যে, আমরা সকলেই সংস্কারের পক্ষে। রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার পৃথকীকরণ রাজস্ব ব্যবস্থার পূর্নাঙ্গ সংস্কারের জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা বলছি, এই সংস্কার হতে হবে বাস্তবমুখী, অংশীজনের মতামতভিত্তিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ মূল্যায়নের মাধ্যমে।
এই কর্মকর্তারা বলেন, করদাতা ও সেবাপ্রার্থীদের এই আন্দোলনের ফলে সাময়িক অসুবিধার জন্য ঐক্য পরিষদ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে, তাদের এই সাময়িক ত্যাগ দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও রাজস্ব ব্যবস্থার টেকসই সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, আমরা এটাও জানিয়ে রাখতে চাই, আমাদের দাবি আদায় হলে আমরা নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে কাজ করে অনিষ্পন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করব। এই দাবির যৌক্তিকতার পক্ষে অবস্থান তুলে ধরায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এসোসিয়েশন, অ্যাসোসিয়েশন অব রিটায়ার্ড বিসিএস অফিসার্স অব কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাটসহ (আরবোকাভ) সকল স্টেকহোল্ডারদেরকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে গত বুধবার থেকে কলম বিরতি কর্মসূচি শুরু করেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। এর আগে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চলমান অচলাবস্থার সমাধানে তারা প্রস্তুত। চলমান কলম বিরতির ফলে রাজস্ব আদায় এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, এনবিআর সংস্কার কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করেই এনবিআর পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সরকার এনবিআরকে দুটি আলাদা সত্তা—রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভাগ করে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা এনবিআর সংস্কার কমিটির সুপারিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
** অধ্যাদেশ বাতিল না হলে কলম বিরতি চলমান থাকবে
** এনবিআর বিলুপ্ত: অধ্যাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
** এনবিআর সংস্কার: আলোচনায় রাজি অর্থ উপদেষ্টা
** রোববার ৬ ঘণ্টা কলম বিরতি, আলোচনায় রাজি
** তিন ঘণ্টার কলম বিরতি, স্থবির রাজস্ব কার্যক্রম
** ‘পরিকল্পনা ছাড়া এনবিআর ভাঙা অস্থিরতা তৈরি করেছে’
** এনবিআর অচলাবস্থা, সমাধানে সরকারের তৎপরতা
** কর-কাস্টমস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনে গণপদত্যাগ