চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্ত পর্যালোচনা করতে শনিবার ( ৫ এপ্রিল ) বাংলাদেশে পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল। এই ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের আগে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকে বসছে। আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির অন্যতম শর্ত ছিল, করছাড় তুলে দেওয়া এবং রাজস্ব আদায় বাড়ানো। সেই হিসেবে আগামী অর্থবছরের বাড়তি প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের শর্ত রয়েছে। এই শর্ত বর্তমান বাস্তবতায় পূরণ করা প্রায় অসম্ভব বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা। তাই আগামীকাল সোমবার আইএমএফের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে বিষয়গুলো তুলে ধরবেন এনবিআর কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে হলে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাড়তি প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আহরণ খুবই কঠিন বলে জানিয়েছেন এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ভ্যাটের ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আদায় করতে গিয়ে দেশে তীব্র চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। পরে অনেক পণ্যের ভ্যাটের হার কমাতে হয়েছে। আর নতুন করে ভ্যাট আরোপ করার তেমন একটা সুযোগ নেই। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের পাল্টা শুল্কারোপের কারণে বাড়তি শুল্ক আদায় খুবই কঠিন। এরই মধ্যে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যদিও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর আইএমএফের বড় কোনো দলের ঢাকায় এটি দ্বিতীয় সফর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আগামী অর্থবছরের আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী বাড়তি রাজস্ব আদায় করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তাই আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব। আগামীকাল থেকে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে প্রতিনিধিদলের সিরিজ বৈঠক শুরু হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
সূত্র আরও জানায়, আইএমএফের প্রতিনিধিদল রোববার ( ৬ মার্চ ) প্রথমেই বৈঠকে বসবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। সকাল পৌনে ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে এই বৈঠক। পরবর্তী দিন সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এনবিআর চেয়ারম্যান ও তিনটি পলিসি শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। এ ছাড়া ৯, ১৫ ও ১৬ এপ্রিল এনবিআরের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের বৈঠক রয়েছে। সবশেষ ১৭ এপ্রিল অর্থ উপদেষ্টা এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করবে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর তিনটি কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার বাংলাদেশ পায়। মোট তিন কিস্তিতে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ, তবে চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড় এখনো বাকি রয়েছে, যা ২৩৯ কোটি ডলার। সরকার আশা করছে, আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইএমএফের ঋণের দুটি কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পেতে বাংলাদেশের সামনে মোটা দাগে তিনটি প্রধান বাধা রয়েছে। এগুলো হলো—মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৫ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব আদায়, এবং এনবিআরের রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএমএফকে জানানো হয়েছে যে, এসব শর্ত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার পদক্ষেপ ছাড়া বাকি দুটি শর্তে তেমন অগ্রগতি নেই। তবে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করা হচ্ছে, যার ফলে হঠাৎ ডলারের দাম খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমানে ডলারের দাম কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।