রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ছে না, জরিমানা দিতে হবে

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় তিনবার বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি রিটার্ন দাখিলের সময় ১৬ দিন বাড়ানো হয়, যা রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে। তবে রিটার্ন দাখিলের সময় আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁওয়ে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) নেতাদের সঙ্গে জুয়েলারি খাতে ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এনবিআর থেকে বলা হয়েছে, করদাতারা অনলাইন ও কর অফিসে সারাবছর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এতে আয়কর আইন অনুযায়ী ২ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে।

চেয়ারম্যান বলেন, অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ১০ হাজার করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন। আজ রাত ১২টায় বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত আরও ২০-৩০ হাজার রিটার্ন বাড়তে পারে। অনেকে আগের নিয়মে কাগুজে রিটার্ন দাখিল করেছেন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৭ থেকে ৩৮ লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন। দেশে বর্তমানে টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা ১ কোটি ১৪ লাখের মতো। আজ রাত ১২টার আগে রিটার্ন দাখিল করলে কোনো জরিমানা লাগবে না। তবে এরপরও রিটার্ন দাখিল করা যাবে, সে ক্ষেত্রে জরিমানা গুনতে হবে।

বছরব্যাপী অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সুবিধা

এনবিআর বলছে, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত ব্যবস্থা করদাতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। করদাতাদের চাহিদা ও মতামতের ভিত্তিতে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া ক্রমশ সহজীকরণ ও অধিকতর করদাতাবান্ধবকরণের ফলে ইতোমধ্যে এবছর ১৪ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন। এছাড়া আরো ১৮ লাখের বেশি করদাতা ই-রিটার্নের জন্য রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। আয়কর দিবস পরবর্তী সময়েও এনবিআর অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সেবাটি বছরব্যাপী চালু রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আয়কর দিবস পরবর্তী সময়ে রিটার্ন দাখিল করলে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ৭৬ ধারা অনুযায়ী, করদাতারা বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত এবং কোনরূপ কর অব্যাহতি পাবেন না। এছাড়া, কর দিবসে যে পরিমাণ কর অপরিশোধিত থাকবে, তার ওপর আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১৭৪ ধারা অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে (সর্বোচ্চ ২৪ মাস) অতিরিক্ত কর আরোপ করা হবে।

১০০ টার মধ্যে একটা সোনা চোরাচালান ধরতে পারছি: এনবিআর চেয়ারম্যান

সোনা চোরাচালান রোধে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিলেন চেয়ারম্যান। জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এটা দেশের মানুষের জন্য, কারও জন্য ভালো নয়। তাহলে এ খারাপ কাজটা আমরা কেন কন্টিনিউ করছি। যদি বলেন এটা করছি না, তাহলে এগুলো আসে কোথা থেকে। আমরা ১০০টার মধ্যে একটা ধরতে পারি। ৯৯টা ধরতে পারি না, নানান কারণে। এজন্য সমস্যাগুলো শুনতে চাই। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যাগুলো কী আমাদের জানান। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আপনাদের সমস্যাগুলো জেনে, সমস্যা দূর করতে চাই। এত এত সোনার বাজার অথচ সোনা আমদানি নেই কেন এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। এর জবাব আমি খুঁজতে চাই।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহে সাড়ে ১৭ কেজি সোনা জব্দ করা হয়েছে সিলেটে। এটা একদিকে বেআইনি কাজ, এজন্য বড় বড় শাস্তি আছে। আবার এই চোরাচালানকে কেন্দ্র করে প্রচুর খুন খারাবি হয়। সর্বশেষ বড় একটা সেনসেশনাল, মান্টিন্যাশনাল কিলিং দেখেছি। যার বডিও পাওয়া যায়নি। বলা হয় উনি এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সোনা আমদানি কম হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, যাত্রীরা যারা বিদেশ থেকে সোনা আনেন তাদের ব্যাগেজ রুলসের আওতায় কর দিতে হয়। কিন্তু যারা আমদানি করেন তাদের ক্ষেত্রে কর অনেক কম। তারপরও আমাদের সোনা আমদানি হয় না কেন? দেশে এত এত জুয়েলারি, এসবে সোনা আসছে বিক্রি হচ্ছে কিন্তু আমদানির কোনো রেকর্ড নেই। আমদানির রেকর্ড খুবই সামান্য। অথচ আমদানি অ্যালাউ করা হয়েছে, আমদানি নীতিমালা আছে।

বাজুসের নেতারা জানান, চার বছর ধরে আমদানির লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। দুই বছর ব্যবসায়ীরা আর্থিক কারণে আমদানি করতে পারেনি। এনবিআরের উচিত কর হার কমানো। এসময় তারা সোনা আমদানিতে শুল্ক কমানো, পদ্ধতি সহজ করার দাবি জানান। এসময় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনেক প্রবাসী সোনা নিয়ে আসেন। তাদের ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্যাগেজ রুলসটার মিসইউজ করা হচ্ছে। আমরা ব্যাগেজ রুলসটা পরিবর্তন করবো। যাতে ব্যবসায়ীরা ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারে।

ডলার সংকটে চাল, গ্যাস আমদানির বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না: এনবিআর চেয়ারম্যান

ডলার সংকটের কারণে চাল ও গ্যাসের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আবদুর রহমান খান। তিনি বলেছেন, ‘চাল বা ফুয়েল এগুলো না হলে তো দেশ চলবে না। এগুলোর বিল পর্যন্ত দিতে পারছে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানিয়েছে। আপনারা তো বুঝতেই পারছেন ব্যাংকিং সেক্টরে কি ধরনের অরাজকতা ছিল।’ সভায় ডায়মন্ড আমদানিতে উচ্চ শুল্কের প্রসঙ্গ তুলে তা সহজ করার দাবি জানালে এনবিআর চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হবে, তখন সরকারও এই ধরনের রেস্ট্রিকশন তুলে নেবে।’ সভায় জুয়েলারি শিল্পের নেতারা জুয়েলারির ওপর থেকে বিদ্যমান কর ও ভ্যাট হার কমানোর প্রস্তাব দেন। একইসঙ্গে দেশব্যাপী যেসব স্বর্ণ ব্যবসায়ী ভ্যাটের আওতার বাইরে আছেন, তাদের ভ্যাটের আওতায় আনার পরামর্শ দেন। এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান জুয়েলারি আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাগেজ রুলসে সংশোধন আনা হবে বলে জানান। সেই সঙ্গে অগ্রিম আয়কর বসানোর বিষয়েও ইঙ্গিত দেন তিনি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!