২ জুন অন্তবর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছে। এই প্রস্তাবিত বাজেটে আয়কর খাতের ১২টি এসআরও বা আদেশ বাতিল করা হয়েছে। ২০০৯ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে জারি করা এসব এসআরও বা আদেশে বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি, কর হ্রাস বা কমানো হয়েছিলো। কিছু খাতের সক্ষমতা অর্জন, ব্যবসার প্রসারে অব্যাহতি বা করছাড় দেওয়া হয়। তবে অব্যাহতি বা করছাড়ের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় অপব্যবহার, করফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠে। আবার কিছু খাতের করছাড় নিয়ে তুমুল বির্তক ও সমালোচনা হয়েছে। সেজন্য সরকার এসব এসআরও বা আদেশ বাতিল করে দিয়েছে। তবে অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হতে আইএমএফ এর চাপও ছিলো। বাতিল হওয়া এই ১২টি এসআরও-তে কোন খাত, কি সুবিধা পেয়েছে-তা দেখে নিতে পারেন।
এসআরও-৩৩-আইন/২০০৯
২০০৯ সালের ৯ মার্চ জারি করা এসআরও-৩৩ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী কোনো করদাতা তিনটি খাতে দান করলে তা করমুক্ত হিসেবে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো-সম্প্রতি নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবার নামে গঠিত ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’। বগুড়ার রেফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতাল (আরসিএইচ), যা বর্তমানে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতাল নামে পরিচিত। এছাড়া মানিকগঞ্জের স্যালভেশন ফর দি ডিজার্ভিং (এসএফডি) হাসপাতাল রয়েছে।
এসআরও-৩৯৩-আইন/২০১৩
২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি জারি করা এসআরও-৩৯৩ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী, ফিলানথ্রোপিক ইনস্টিটিউট বা জনহিতকর প্রতিষ্ঠান ‘ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিকস ফাউন্ডেশনে’ কোন করদাতার দানকে করমুক্ত হিসেবে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এসআরও-১৯৯-আইন/২০১৫
২০১৫ সালের ১ জুলাই জারি করা এসআরও-১৯৯ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী, পেলেটেড পোল্ট্রি ফিড (খোসা ছাড়ানো হাঁস-মুরগির খাবার) উৎপাদন, গবাদি পশু, চিংড়ি ও মাছের পেলেটেড ফিড উৎপাদন, বীজ উৎপাদন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বীজ বিপণন, গবাদি পশুর খামার, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের খামার, ব্যাঙ উৎপাদন খামার, উদ্যান (হর্টিকালচার) খামার প্রকল্প, তুঁত গাছের চাষ, মৌমাছির চাষ প্রকল্প, রেশম গুটিপোকা পালনের খামার, ছত্রাক (মাশরুম) উৎপাদন খামার, ফুল ও লতাপাতার চাষ হতে অর্জিত আয়ের উপর আয়কর হ্রাস করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রথম ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ, পরবর্তী ২০ লাখ টাকার উপর ১০ শতাংশ ও অবশিষ্ট আয়ের উপর ১৫ শতাংশ কর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ১ জুলাই ২০১৫ থেকে সর্বশেষ ২০২৪-২৫ করবর্ষ পর্যন্ত এই এসআরও সুবিধা বহাল ছিলো।
এসআরও-২৫৫-আইন/২০১৫
২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট জারি করা এসআরও-২৫৫ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী, হাঁস-মুরগি, চিংড়ি ও মাছের হ্যাচারি এবং মৎস্য চাষ হতে অর্জিত আয়ের উপর কর হ্রাস করা হয়। এর মধ্যে এসব খাত থেকে প্রথম ১০ লাখ পর্যন্ত আয়ের উপর কর শূন্য বা অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরবর্তী ১০ লাখ টাকা আয়ের উপর ৫ শতাংশ ও অবশিষ্ট আয়ের উপর ১০ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ১ জুলাই ২০১৫ থেকে এই কর ছাড় সুবিধা দেওয়া হয়। তবে মৎস্য, হ্যাচারি, পোল্ট্রিসহ বেশ কয়েকটি খাতে আয়ের ক্ষেত্রে করছাড় সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠে। এছাড়া এসব খাতে কালো টাকা সাদা করার প্রমাণও পায় এনবিআর। সমালোচনা আর অপব্যবহার হওয়ায় এসব খাতে করছাড় সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
এসআরও-১৩২-আইন/২০১৮
২০১৮ সালের ১৩ মে জারি করা এসআরও-১৩২ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী, ন্যাচারাল গ্যাসের উপর কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এসআরও-২৭-আইন/২০১৯
২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি জারি করা এসআরও-২৭ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী, জনহিতকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গফুর মরিয়ম সাত্তার সাকেরা ফাউন্ডেশনের (জিএমএসএস) এর অনুকূলে কোন করদাতার দানকে করমুক্ত হিসেবে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এসআরও-১৫৭-আইন/২০২২
২০২২ সালের ১ জুন জারি করা এসআরও-১৫৭ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী, হাঁস-মুরগির খামার, হাঁস-মুরগি, চিংড়ি ও মাছের হ্যাচারি এবং মৎস্য চাষ হতে অর্জিত আয়ের উপর কর হ্রাস করা হয়েছে। এর মধ্যে এসব খাত থেকে আয়ের প্রথম ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কর শূন্য। পরবর্তী ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ১০ শতাংশ ও অবশিষ্ট আয়ের উপর ১৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসআরও-২৫৩-আইন/২০২৩
২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট জারি করা এসআরও-২৫৩ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী, সঞ্চয়ী আমানত ও স্থায়ী আমানত ইত্যাদি হতে অর্জিত সুদ বা মুনাফা; সঞ্চয়পত্র হতে অর্জিত মুনাফা এবং রপ্তানির বিপরীত প্রাপ্ত নগদ ভর্তুকি হতে আয় হতে উৎসে কর্তিত করের পরিমাণকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে নির্ধারণ করে এসব আয়ের বিপরীতে অতিরিক্ত কোনো করদায় পরিশোধ হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সঞ্চয়ী আমানত ও স্থায়ী আমানত ইত্যাদি হতে অর্জিত সুদ বা মুনাফা কেবল রিটার্ন দাখিল হতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত করদাতারা এই সুযোগ পাবেন। আর সঞ্চয়পত্র হতে অর্জিত মুনাফা সকল স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা ও রপ্তানির বিপরীতে প্রাপ্ত নগদ ভর্তুকি সকল করদাতারা এই সুযোগ নিতে পারবেন।
এসআরও-২৮৬-আইন/২০২৩
২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর জারি করা এসআরও-২৮৬ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী, সম্পত্তি হস্তান্তর হতে অর্জিত মূলধনি আয়ের ক্ষেত্রে উৎসে কর্তিত করের পরিমাণকে চূড়ান্ত করদায় হিসবে নির্ধারণ করে এর উপর অর্জিত আয়ের বিপরীতে অতিরিক্ত কোনো করদায় পরিশোধ হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। সকল স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা এই সুবিধা নিতে পারবেন।
এসআরও-৩৮২-আইন/২০২৪
২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর জারি করা এসআরও-৩৮২ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী, সিদ্ধ ও নন-সিদ্ধ চালের আমদানিতে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এসআরও-৩৮৩-আইন/২০২৪
২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর জারি করা এসআরও-৩৮৩ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী, আয়কর আইনের ৩৪১ ধারার ক্ষমতাবলে আইনের সপ্তম তফসিল (বিশেষ করহার) সংশোধন করা হয়। অর্থাৎ বিশেষ করহার সাধারণত অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। আদেশ অনুযায়ী, ‘মূলধনি আয়’ হিসেবে পরিগণিত হয়-এমন আয়ের ক্ষেত্রে করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোম্পানি, তহবিল ও ট্রাস্ট কর্তৃক অর্জিত মূলধনি আয়ের উপর ১৫ শতাংশ; কোম্পানি, তহবিল ও ট্রাস্ট ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে অর্জিত মূলধনি আয়ের উপর ১৫ শতাংশ করহার নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া কোম্পানি, তহবিল ও ট্রাস্ট ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে অর্জিত মূলধনি আয় ব্যতীত, অন্যান্য আয়ের ক্ষেত্রে-যেইক্ষেত্রে মূলধনি পরিসম্পদ অর্জন বা প্রাপ্তির অনধিক ৫ বছরের মধ্যে পরিসম্পদ হস্তান্তর হয়, সেইক্ষেত্রে এই রূপ মূলধনি আয় মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং মোট আয়ের উপর নিয়মিত করহার হবে। যেইক্ষেত্রে মূলধনি পরিসম্পদ অর্জন বা প্রাপ্তির পাঁচ বছর অতিক্রম হবার পর পরিসম্পদ হস্তান্তর হয়, সেইক্ষেত্রে এইরূপ মূলধনি আয়ের ১৫ শতাংশ কর হবে। ১ জুলাই ২০২৫ আরদ্ধ করবর্ষ হতে এই আদেশ কার্যকর হবার কথা ছিলো, যা বাতিল করা হয়েছে। তবে তুমুল বির্তক আর সমালোচনার পর আদেশ জারির পরপরই তা বাতিল করা হয়।
এসআরও-৮২-আইন/২০২৫
২০২৫ সালের ১২ মার্চ জারি করা এসআরও-৮২ বাতিল করা হয়েছে। এই এসআরও অনুযায়ী, শুকনা ও তাজা ফলের উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৫ শতাংশ করা হয়। ফলের মধ্যে রয়েছে-তাজা বা শুকনা কমলা লেবু, লেবু, লেবু জাতীয় ফল, আঙ্গুর, তাজা আপেল ও নাশপাতি।
বাজেট ২০২৫-২৬ সংক্রান্ত নিউজ
** বাজেটে ১১০ পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার
** বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫.৬৪ লাখ কোটি টাকা
** উপদেষ্টা পরিষদে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন
** বাজেটে যেসব পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে
** বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য পাঁচ সুখবর
** বাজেটে ‘দুর্নীতির কর’ চালুর প্রস্তাব
** বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে ও কমতে পারে
** সংসদের জন্য ২৩২ কোটি টাকা বাজেট অনুমোদন
** বাজেটে জমির মূল্য নির্ধারণে বড় পরিবর্তন আসছে
** আসন্ন বাজেটে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে
** মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বাজেটের মূল লক্ষ্য
** বাজেটে ন্যূনতম কর দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা
** বাজেটে ২০০ পণ্যে অগ্রিম কর বসতে পারে
** বাজেটে ফ্রিজ-এসিতে ভ্যাট বাড়ছে
** ২০২৫-২৬ বাজেটে টাস্কফোর্সের যত সুপারিশ
** কমছে বাজেটের আকার, বাড়ছে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা
** শুল্ককর ছাড়াই বছরে একটি নতুন মোবাইল আনা যাবে
** কোম্পানির তহবিলের ওপর করের চাপ কমল
** এক্সিট রুট রাখতেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ
** কালো টাকা সাদা করার বিধান পুনর্বিবেচনা করা হবে
** সম্পূরক শুল্ক কমলো: যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে
** সম্পূরক শুল্ক বাড়ল: যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
** ফ্ল্যাট ও গৃহনির্মাণে খরচ বাড়বে
** অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনে ভ্যাট বেড়ে ১৫%
** দুই করবর্ষের করমুক্ত আয়সীমা নির্ধারণ
** গৃহস্থালি পণ্যের দাম বাড়তে পারে
** ব্রোকারেজ হাউসে করছাড়, মার্চেন্ট ব্যাংকের কর কমছে
** গাড়ির নিবন্ধন ফিটনেস-নবায়নে অগ্রিম কর বাড়ছে
** করমুক্ত আয়সীমার সাথে বাড়ছে করের চাপ
** জমি বিক্রির অপ্রদর্শিত টাকা কর দিয়ে সাদা করা যাবে
** অটোরিকশায় নিয়ন্ত্রণ: মোটরের শুল্ক এক লাফে ১৫% হচ্ছে
** ওয়ান টাইম প্লাস্টিকে ভ্যাট হতে পারে দ্বিগুণ
** ৭৯ ওষুধ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কছাড়
** রড ও স্টিল পণ্যের দাম বাড়তে পারে
** ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আবগারি শুল্ক দিতে হবে না
** কাস্টমসে মিথ্যা-ভুল ঘোষণার জরিমানা অর্ধেক হচ্ছে
** নতুন করদাতাদের ছাড়, ন্যূনতম কর ১০০০ টাকা
** কৃষিভিত্তিক খাতে কর ছাড় বাতিলের পরিকল্পনা