৩ পণ্য দিয়ে শুরু, এখন বিক্রি ৯৫০

২০০৩ সালে দেশের শীর্ষ খাদ্য প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান প্রাণ প্রথমবারের মতো আরব আমিরাতের বাজারে প্রবেশ করে। ব্যবসার শুরুতে শারজাহ শহর থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকায় (১৫ হাজার দিরহাম) একটি পুরোনো গাড়ি কিনে একজন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে সীমিত পরিসরে লিচুর জুস, চানাচুর ও মুড়ি বিক্রি শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসা শুরুর দিনগুলো বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ আরব আমিরাতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য ছিল না।’তবে সেসব এখন অতীত। বর্তমানে, আমিরাতের বাজারে প্রাণ ৯৫০ পণ্য বিক্রি করছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে।মুদি দোকান থেকে শুরু করে চেইন সুপারমার্কেটে প্রাণের পণ্য দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয়। প্রতিষ্ঠানটির সস, নুডলস, জুস, মশলা, সরিষার তেল, ডাবের পানি, বিস্কুট ও মুড়ির চাহিদা বেশি।

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আরব আমিরাতে ১৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি আমাদের গ্রাহক। আমরা যখন আমিরাতে ব্যবসা শুরু করি, তখন প্রবাসী বাংলাদেশিরাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। তাদের কাছে পৌঁছানোর পর আমরা দক্ষিণ এশীয় ও স্থানীয় ক্রেতাদের টানতে শুরু করি।’এখন অনেক নেপালি, আরব ও ফিলিপিনো প্রাণের পণ্য নিয়মিত কেনেন বলেও জানান তিনি।

গত অর্থবছরে আমিরাতে ইমার্জিং ওয়ার্ল্ড গ্রুপের মাধ্যমে প্রাণ ২৪৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা ও ওশেনিয়ায় প্রাণের পণ্য বিক্রি করছে।পণ্য বিক্রি, বিপণন ও বিতরণ নিশ্চিত করতে ইমার্জিং ওয়ার্ল্ড কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৩৫ করেছে। এর বহরে আছে ৩৫০টি গাড়ি।

আহসান খান চৌধুরী আরও বলেন, ‘ইমার্জিং ওয়ার্ল্ড বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণ পেতে কাজ করছে। ঋণ পেলে দুবাইয়ে পণ্য উৎপাদন কারখানা করার পরিকল্পনা আছে।’বর্তমানে বেশিরভাগ পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। কিছু আসে অন্য দেশের কারখানা থেকে।গুণমান ও প্রতিযোগিতামূলক কম দামের কারণে প্রাণের পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

গত মঙ্গলবার দুবাই, আজমান, শারজাহ ও সানাইয়ার বিভিন্ন হাইপারমার্কেট ও সুপারমার্কেট, যেমন নেস্টো, আল মদিনা ও মার্ক অ্যান্ড সেভ ঘুরে দেখা যায়, প্রাণের পণ্যগুলোকে গুরুত্বসহকারে প্রদর্শন করা হচ্ছে। আল মদিনার এক আউটলেটের মার্কেটিং ম্যানেজার মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন জানান, তারা প্রায় আট বছর ধরে প্রাণের পণ্য বিক্রি করছেন এবং বর্তমানে ২৪০টি পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রাণের ক্রেতাদের মধ্যে শুধু বাংলাদেশিরাই নন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের ক্রেতারাও রয়েছেন।’

প্রতিযোগিতা, সম্ভাবনা ও সংকট
বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল পর্যটন গন্তব্য হিসেবে আরব আমিরাতে প্রতিযোগিতা অনেক।পানীয় পণ্যের বাজারে প্রাণের প্রতিযোগীদের মধ্যে আছে রানি, পেপসিকো, কোকাকোলা ও স্টার। মশলা পণ্যের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের মেহরান ও শান এবং দক্ষিণ ভারতীয় বিজয়া। নুডলস পণ্যে মূল প্রতিযোগীদের মধ্যে আছে ইন্দোমি, ম্যাগি ও বুলডাক।

প্রাণ গ্রুপের রপ্তানি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, আমিরাতের বাজারে ভারতের কয়েকটি ছোট প্রতিষ্ঠান সরিষার তেল বিক্রি করলেও প্রাণের সরিষার তেলের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি, ভারতীয়, ফিলিপিনো, আফ্রিকান ও আরবদের মধ্যে আমাদের পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে। আমরা পণ্যের প্রচার ও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।’তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফিলিপিনো, থাই, আফ্রিকান ও আরবদের জন্য তাদের পছন্দমতো পণ্য তৈরি করছি, যা ভবিষ্যতে আরও বেশি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। আমিরাতে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজার রয়েছে, তবে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো পণ্যের প্রচার।’মিজানুর রহমান উল্লেখ করেন, ‘আমরা যত বেশি প্রচারণা চালাব, মূলধারার ক্রেতাদের আস্থা তত বাড়বে। তুরস্ক, চীন ও ভারত সরকার নিজ দেশের পণ্যের প্রচারে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদেরও পণ্যের মান, দাম, মোড়ক ও প্রচারণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী দুবাই গালফ ফুড ফেয়ারে অংশ নিয়েছেন। নতুন পণ্য উন্মোচন ও নতুন ক্রেতা আকৃষ্ট করতেই এ মেলায় যোগদান বলে জানান তিনি। আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘এবার লিবিয়া ও ইরাক থেকে কয়েকজন গ্রাহক পেয়েছি। এই দুটি দেশ আমাদের জন্য সম্ভাবনাময় বাজার হতে পারে।’বর্তমানে প্রাণের পণ্য ১৪৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ৩৭৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে।

**প্রাণ গ্রুপের ২৫০ কর্মকর্তার একসঙ্গে ওমরাহ
**সেন্টমার্টিনে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চাকরিমেলা
**বন্যার্তদের সহায়তায় প্রাণ-আরএফএল’র ‘পাশে আছি বাংলাদেশ’
**বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে প্রাণ ও লাফার্জহোলসিম
**নাটোরে আরও একটি শিল্পপার্ক করবে প্রাণ-আরএফএল

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!