আমদানিতে অগ্রিম কর বাড়ছে, কমছে শিল্পে

বাজেট ২০২৫-২৬

** শিল্প উপকরণর আমদানিতে অগ্রিম কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ হচ্ছে
** শিশু খাদ্য, মশলা, ফল, পোশাক, যানবাহন, খেলনা, সিরামিক পণ্য, বাথরুম ও বৈদ্যুতিক ফিটিংস, সুইচ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে অগ্রিম কর বাড়ছে

২০২৫-২৬ বাজেটে বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর অগ্রিম কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং ভ্যাট আদায়ে চলমান অনিয়ম ও ফাঁকি পুষিয়ে নিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রস্তাবিত এ কর বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা সমালোচনা করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এ সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন পণ্যের দামে প্রভাব পড়তে পারে।

এনবিআর সূত্রমতে, শিশু খাদ্য, মশলা, ফল, পোশাক, যানবাহন, খেলনা, সিরামিক পণ্য, বাথরুম ও বৈদ্যুতিক ফিটিংস, সুইচ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামসহ বিভিন্ন আমদানিকৃত পণ্যে অগ্রিম করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে। একই সঙ্গে আগামী অর্থবছর থেকে স্থানীয় সরবরাহে বর্তমানে আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া, শিল্প উপকরণের ওপর আরোপিত ৩ শতাংশ অগ্রিম কর কমিয়ে ২ শতাংশ করা হতে পারে।

কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আমদানির ওপর অগ্রিম কর বাড়ালে আগামী অর্থবছরে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে। স্থানীয় বিক্রয় থেকে খুব সামান্য ভ্যাট আদায় হয়। আর শিল্প কাঁচামালের ওপর পরিশোধিত অগ্রিম কর পরে ফেরত দেওয়া হয় বা সমন্বয় করা হয়। ফলে আমদানির সময় অগ্রিম কর আদায় করাই বেশি কার্যকর। এতে আদায় নিশ্চিত হয় এবং ফাঁকি দেওয়া কঠিন হয়। ভ্যাট হার কমালে বা অব্যাহতি দিলেও রাজস্বে বড় ধরনের ক্ষতি হয় না। কিন্তু আমদানিতে অগ্রিম কর বাড়ালে রাজস্ব অনেক বেশি বাড়বে।

হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে আদায় হয়েছে ১২ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই থেকে এপ্রিল) আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভ্যাট ফাঁকিবাজদের ধরার বদলে সরকার সব আমদানিকারককে শাস্তি দিচ্ছে। অগ্রিম কর বাড়ালে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাবে। এ ধরনের কর বৃদ্ধিতে সৎ ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর অসৎ ব্যবসায়ীরা, যারা প্রায়ই কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেন, তাদের কিছুই হয় না। শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদেরই চড়া দাম দিয়ে কষ্ট করতে হয়। কর বাড়িয়ে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করানো ন্যায্য নয়।

উল্লেখ্য, এক সময় অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট হিসেবে আগাম ভ্যাট আদায় হতো। পরে নতুন ভ্যাট আইনে তা বাতিল করা হলেও এখন অগ্রিম কর এখন আমদানির পর্যায়ে বিকল্প ভ্যাট হিসেবে কার্যকর হচ্ছে। তবে অগ্রিম কর ভোজ্যতেল, চিনি, নির্দিষ্ট জ্বালানি, শিল্প যন্ত্রপাতি ও উৎপাদন কাঁচামালের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ক্ষেত্রে এই অগ্রিম কর প্রযোজ্য নয়। মূলত, এটি বাণিজ্যিকভাবে আমদানি হওয়া বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের ওপরই আরোপিত রয়েছে।

এনবিআর বলছে, দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পরিমাণ দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১৭ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা। যদি এর পুরো ভ্যাট আদায় সম্ভব হতো, তাহলে রাজস্ব আদায় ৫০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারত। অথচ বর্তমানে আদায় হচ্ছে মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকা।

এনবিআর সূত্রমতে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে টেক্সটাইল খাতের কর রেয়াত সুবিধা উঠে যাচ্ছে। টেক্সটাইল খাতের ১৫ শতাংশ কর রেয়াত তুলে দিলে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির জন্য করহার হবে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ; যা প্রায় ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটতে চলেছে। অথচ বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্য ১ হাজার ৮৫৪টি কোম্পানির মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শুধু ৫৮টি। ফলে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানই বাড়তি করের সরাসরি শিকার হবে।

বিটিএমএ বলছে, এই খাতে করহার ১৫ শতাংশ বলা হলেও কার্যকর হার অনেক বেশি। মুনাফা মাত্র ৩ শতাংশ হলেও ১ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়; মানে কার্যকর হার দাঁড়ায় ৩৩ শতাংশ। এখন ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর এলে এবং উৎসে কর সমন্বয় না থাকলে কার্যকর করহার গিয়ে দাঁড়াবে ৬৬ শতাংশ। এনবিআর বলছে, আগামী জুনে টেক্সটাইল খাতের কর রেয়াত মেয়াদ শেষ হলে তা আর নবায়ন করা হবে না। উন্নয়ন সহযোগীরা রেয়াত তুলে ধাপে ধাপে কর আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। সেভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।

** আসন্ন বাজেটে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে
** বাজেটে জমির মূল্য নির্ধারণে বড় পরিবর্তন আসছে
** মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বাজেটের মূল লক্ষ্য
** বাজেটে ন্যূনতম কর দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা
** বাজেটে ২০০ পণ্যে অগ্রিম কর বসতে পারে
** বাজেটে ফ্রিজ-এসিতে ভ্যাট বাড়ছে
** ২০২৫-২৬ বাজেটে টাস্কফোর্সের যত সুপারিশ
** কমছে বাজেটের আকার, বাড়ছে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা
** ২ জুন বাজেট ঘোষণা দেবে সরকার
** আগামী অর্থবছরের বাজেট ৭.৯০ লাখ কোটি টাকার
** বাজেটে জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধন কর কমেতেছে!
** বিনিয়োগবান্ধব বাজেট চান ব্যবসায়ীরা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!