চালের দাম বেড়েই চলেছে

সারাদেশে হঠাৎ করে আবারও বেড়েছে চালের দাম। এতে ভোক্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে। তাদের নিত্য খরচে যুক্ত হয়েছে নতুন চাপ, বেড়েছে দুশ্চিন্তা। শুক্রবার (৪ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি চাল মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে দোকানদাররা জানান, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ার ফলে খুচরায়ও তা প্রভাব ফেলেছে। অনেক ক্রেতা এ অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। তাদের মতে, ঈদের পর থেকেই চালকল মালিকরা দাম বাড়িয়েছেন। বর্তমানে প্রতি বস্তা চালের দাম আগের তুলনায় ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেশি। ফলে খুচরায় প্রতিকেজি চাল মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন স্বল্প আয়ের মানুষ। বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি তাদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি বোরো মৌসুমের নতুন চাল বাজারে আসার পর সরু চালের দাম কমে ৭৫ টাকা হয়েছিল, কিন্তু এখন তা বেড়ে ৮০ থেকে ৮২ টাকায় পৌঁছেছে—যা অস্বাভাবিক। মাঝারি ও মোটা চালেও একই চিত্র। বাজারে চালের কোনো সংকট না থাকলেও দাম বাড়ছে, আর এর পেছনে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি।

ভোক্তাদের অভিযোগ, কিছু ব্যবসায়ী মজুত নীতিমালা না মেনে ধান ও চাল গুদামজাত করছেন, ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বারবার চালের দাম বাড়ছে এবং সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। তারা প্রশ্ন তুলছেন—যখন বাজারে চালের ঘাটতি নেই, তখন দাম বাড়ছে কেন? এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেন কার্যকরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে না, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

ব্যবসায়ীরা জানান, এখন চালের দাম ওঠানামা আর উৎপাদন বা আমদানির ওপর নির্ভর করে না। ধান ও চালের বাজার দীর্ঘদিন ধরেই চলে মিল মালিক ও বড় ব্যবসায়ীদের ইচ্ছামতো। তারা যেভাবে চালান, বাজার সেভাবেই চলে। বড় মিলগুলো যে দামে চাল ছাড়ে, খুচরা ব্যবসায়ীদের তা-ই কিনতে হয়। মিল মালিকদের দাবি, তাদের বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, তাই বাধ্য হয়েই চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

টিসিবি ও খাদ্য অধিদপ্তর স্বল্পদামে চাল বিক্রির চেষ্টা করলেও তা খুবই সীমিত পরিমাণে হয়, যার ফলে অধিকাংশ সাধারণ মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না। এই অবস্থায় সচেতন নাগরিকরা চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কাছে তৎপর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকবে এবং আরও বেশি মানুষ দুর্ভোগের মুখে পড়বে।

বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, চালের বাজার নিয়ে সরকারের কোনো নজর নেই। তিনি বলেন, আগের সরকারের সময় আমরা চালের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি এবং মামলাও হয়েছে, কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও আমরা আশা করেছিলাম, কিন্তু তারা এ বিষয়ে চুপ রয়েছে। সরকার চাইলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারত, কিন্তু অজানা কারণে তা করছে না। প্রতিযোগিতা কমিশন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়, অথচ একটি গোষ্ঠী বাজারের ৩২ শতাংশ চাল নিয়ন্ত্রণ করছে বলে আমরা কমিশনকে জানিয়েছি।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভরা মৌসুমেও এমন দামের ঊর্ধ্বগতি আগে কখনো হয়নি। মোকাম ও আড়তে প্রচুর চাল থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়ছে। কৃষকের কাছ থেকে ধান চলে যাওয়ার পর তারা নানা অজুহাত দেখায়। বর্তমানে মিলার ও কর্পোরেট মালিকদের হাতে মজুদ থাকার কারণে তারা নিজেরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার মাঝে মাঝে খুচরা ও পাইকারি দোকানে দাম তদারকি করলেও, মূল উৎসস্থল যেমন মোকাম ও মিল কারখানায় তদারকি করা হয় না।

সরকারের তদারকির ঘাটতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাল বিভাগের মূল কাজ চাল সংগ্রহ হওয়ায় তারা বাজার তদারকি করে না। জেলা প্রশাসনও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে তেমন সক্রিয় নয়। ফলে এই খাতে তাদের আগ্রহ ও মনোযোগের অভাব স্পষ্ট। বাজারে খুচরা ও পাইকারি দোকানে সাময়িক ও লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালিত হয়, যা কার্যকর মনে হয় না।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!