** সোমবার সকাল থেকে এনবিআরে ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বড় জমায়েত হতে পারে
এনবিআর বিলুপ্তি হয়ে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা নামে দুইটি বিভাগ হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীন থেকে সরাসরি চলে যাচ্ছে অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনে। বিলুপ্তিতে এনবিআরের মাঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোরালো আপত্তি নেই। তবে আপত্তি হলো এনবিআর বিলুপ্ত করে দুইটি বিভাগ গঠনের মাধ্যমে একটি ‘বিশেষ ক্যাডারের’ আধিপত্যকে পাকাপোক্ত করার বিরুদ্ধে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুমুল বিরোধিতার মুখেই বিলুপ্ত হচ্ছে এনবিআর। বিলুপ্তি ও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন দুই ক্যাডারের (কাস্টমস-ভ্যাট ও আয়কর) কর্মকর্তারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
সঙ্গে অংশীজন হিসেবে কর আইনজীবীরাও রয়েছেন। তবে দুই ক্যাডারের কর্মকর্তা ও অংশীজনদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই খসড়া অনুমোদনের পর আজ সোমবার অধ্যাদেশের গেজেট জারি হতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। যদিও এর আগে ৯ মে পর্যন্ত আন্দোলন করা হয়। কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করা হয়, অর্থ উপদেষ্টা দেশে ফিরলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই গেজেট জারি করা হবে। গেজেট জারির গুঞ্জনে বৃহত্তর কর্মবিরতি ও গণ-ইস্তফার ইঙ্গিত দিয়েছেন আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এরই অংশ হিসেবে আজ সোমবার (১২ মে) আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে বড় জমায়েত ও আন্দোলন হতে পারে বলে মাঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তাদের প্রশ্ন— এনবিআরের সংস্কার না করে পৃথকীকরণের নামে সংস্থাটি বিলুপ্ত করে আদতে কার লাভ হচ্ছে। কাস্টমস ও ট্যাক্স ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্কারের নামে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্ধকারে রেখে এই অধ্যাদেশ জারি করা হলে তা সারা দেশে রাজস্ব আহরণে বিরূপ প্রভাব তৈরি করবে। বর্তমানে একটি ক্যাডারের কর্মকর্তা সর্বোচ্চ পদে আসীন। নতুন করে দুটি বিভাগ করে আরও একজনকে বসানোর জন্যই তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশটি করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘বর্তমান বাস্তবতায় এটা ক্যাডার সার্ভিসের অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এই অধ্যাদেশের গেজেট জারি করা হলে প্রয়োজনে কর্মবিরতি ও গণ-ইস্তফার ঘোষণা আসতে পারে।’ এর আগে গোপনে ‘রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’-এর খসড়া তৈরি করায় ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন কর্মকর্তারা।
অস্তিত্ব সংকট উপলব্ধি করে দুই সংগঠনের অ্যাসোসিয়েশন বিশেষ জরুরি সভার (ইজিএম) আয়োজন করেছে। সেখান থেকে অবিলম্বে এই খসড়া বাতিল ও এনবিআর বিলুপ্ত না করার দাবি জানানো হয়েছে। অংশীজন হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে একই দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন। রাজস্ব আদায়ের বড় চ্যালেঞ্জ থাকলেও খসড়া অধ্যাদেশের অনুমোদনের পর থেকে রাজস্ব আদায় মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, এনবিআর সংস্কারের প্রতিটি ধাপে চরম গোপনীয়তা নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। তবে গোপনীয়তা সত্ত্বেও খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরই মধ্যে খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে আলাদা বিবৃতিও দিয়েছে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারদের সংগঠন। এ ছাড়া দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার থেকে রাজস্ব ভবনে প্রায় প্রতিদিন জড়ো হচ্ছেন এনবিআরে কর্মরত দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন কাস্টমস ও আয়করের নন-ক্যাডার কর্মকর্তারাও।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, খসড়া অধ্যাদেশটির ভেটিং কৌশলে দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপত্তির মুখে নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে আয়কর ক্যাডার থেকে দুজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কাস্টম ক্যাডারের চার কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে বলে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আর অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজ সোমবার জাতীয় রাজস্ব ভবনে জড়ো হওয়ার অঘোষিত কর্মসূচিতে যাচ্ছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর এনবিআর সংস্কারে পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করেছিল সরকার। এই কমিটির সবাই এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা। সদস্যদের মধ্যে দুজন সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁরা হলেন ড. মো. আবদুল মজিদ ও ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ। বাকি তিনজন সাবেক সদস্য। তাঁরা হলেন মো. দেলোয়ার হোসেন (আয়কর), ফরিদ উদ্দিন (কাস্টমস) ও আমিনুর রহমান (আয়কর)। দেশে বিভিন্ন সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশে কোনো গোপনীয়তা না থাকলেও এই কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশে শুরু থেকেই ছিল গোপনীয়তা। অভিযোগ আছে, এই কমিটি সরকারের কাছে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল, খসড়া অধ্যাদেশে তার তেমন কিছুই রাখা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে এই কমিটির দুজনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পরামর্শক কমিটির সদস্য ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও আমিনুর রহমান বলেছেন, আমরা যেভাবে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দিয়েছি সেভাবে আইনের খসড়া হয়নি। আমরা সরকারের কাছে যে সুপারিশ দিয়েছি সেখান থেকে সরকার কতটুকু নেবে, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো হাত নেই।
এর আগে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এনবিআরের নীতি ও প্রশাসন বিভাগ আলাদা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের চাপ ছিল। ২০০৯ সালে সংসদে অনুমোদন দেওয়া হলেও এনবিআর সংস্কার হয়নি।
**বিলুপ্তিতে আপত্তি, খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলে অনড়
**আয়কর-কাস্টমসের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্ষোভ!
**খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে কর্মকর্তাদের অসন্তোষ, কর্মসূচি
**সংশোধনের আশ্বাস, কর্মকর্তাদের অসন্তোষ-অবিশ্বাস
**ভ্যাট-কাস্টমস সম্প্রসারণ সচিব কমিটিতে
**সচিব নিয়োগে ‘মতামত’ উপেক্ষিত, নাখোশ কর্মকর্তারা
**‘খসড়া অধ্যাদেশ’ বাতিলসহ চার দাবি কর ক্যাডারদের
**স্বতন্ত্র বিভাগ গঠনে রাজস্ব আহরণ বাড়বে?
**বিলুপ্ত হচ্ছে এনবিআর, কমবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ
**এনবিআর পৃথক করার খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদন
**এনবিআর ভেঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনে দুই বিভাগ হচ্ছে
**এনবিআর দুই ভাগ হচ্ছে, ঈদের আগেই অধ্যাদেশ
**প্রশাসন ও নীতি উইং পৃথক করার সুপারিশ
**নতুন চার কাস্টম হাউস ও আট ভ্যাট কমিশনারেট হচ্ছে
**আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস থেকে হবে ‘চেয়ারম্যান’