আন্দোলনকারী আরও শতাধিক কর্মকর্তা ক্ষমা চেয়েছেন

** আন্দোলনকারীদের ক্ষমা প্রশ্নে এনবিআর চেয়ারম্যান-‘চেয়ারম্যান হিসেবে আমার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছেন, আমি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, রাষ্ট্র তাদের ক্ষমা করবে কিনা-তা আমি জানি না।’

আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা আরও শতাধিক কর্মকর্তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের কাছে নি:শর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। বুধবার (৯ জুলাই) আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানের দপ্তরে দুই দফায় আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের এসব কর্মকর্তা দেখা করে ক্ষমা চেয়েছেন এবং দু:খ প্রকাশ করেছেন। এসব কর্মকর্তারা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত থেকে আন্দোলন করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত আয়কর ক্যাডারের প্রায় দুই শতাধিক কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে একইভাবে নি:শর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান মঙ্গলবারের মতো আজও (বুধবার) কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে একই কথা বলেছেন বলে এনবিআরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ক্ষমা করার প্রশ্নে চেয়ারম্যান কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘চেয়ারম্যান হিসেবে আমার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছেন, আমি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, রাষ্ট্র তাদের ক্ষমা করবে কিনা তা আমি জানি না। তবে সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নের অক্সিজেন রাজস্ব আদায়ে মনোযোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছেন।’

এনবিআরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজনেস বার্তাকে জানিয়েছেন, সকাল ৯টার দিকে আয়কর ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে নি:শর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। এছাড়া সোয়া ৯টার দিকে কাস্টমস ও ভ্যাট ক্যাডারের প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা একইভাবে দেখা করে নি:শর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। আন্দোলনের কারণে রাজস্ব আদায়, দেশ ও অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে-তা স্বীকার করে কর্মকর্তারা দু:খ প্রকাশ করেছেন। সরকারের নির্দেশনা মানা ও রাজস্ব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজ করবেন বলে চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন কর্মকর্তারা।

২৯ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। ৩০ জুন এনবিআর চেয়ারম্যান দপ্তরে ফিরে আসেন। ওইদিন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘যা কিছু হয়েছে সব কিছু ভুলে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমরা সবাই কাজ করবো। যে কাজ গুলো আছে সেগুলো এগিয়ে নিয় যাব। আশা করি ভবিষ্যতে এনবিআরকে আর এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না।’

অপরদিকে, এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধন, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দাবিতে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছে। ৬১ দিন চলে এই আন্দোলন। প্রথম অবস্থায় এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধনসহ কয়েকটি দাবি থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে ‘চেয়ারম্যানের অপসারণের’ এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। তবে সরকার কঠোর হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় ২৯ জুন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। তবে কর্মসূচি প্রত্যাহার পরপরই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ১৬ জন কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। আন্দোলনে উস্কানি দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় সরকার এনবিআরের দুইজন সদস্য, একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করে। একইসঙ্গে রাজস্ব ক্ষতি সাধন করে কাস্টম হাউসের কার্যক্রম বন্ধ রাখায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এই আন্দোলনের আড়ালে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র ছিলো বলে তথ্য পায় গোয়েন্দা সংস্থা। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ৮৪৫ পৃষ্ঠার মেসেজ আদান-প্রদানের বিশদ তথ্য এখন গোয়েন্দা সংস্থা।

অপরদিকে, সোমবার (৭ জুলাই) ঢাকা কাস্টম হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘আন্দোলনে জড়িত থাকা এবং সীমালঙ্ঘনকারী কর্মকর্তাদের বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা হবে। তবে বাকিদের ভয়ের কোনো কারণ নেই, যদি তাঁরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রত্যেকে যদি দায়িত্বশীল আচরণ করে, নিজেদের দায়িত্ব ঠিকঠাক সম্পন্ন করে, তাহলে আমি মনে করি না যে তাদের ভয়ের কোনো কারণ আছে। আর কেউ কেউ হয়ত একটু…একটু না অনেক বড় আকারেই, যেটা আমরা বলব সীমালঙ্ঘন করেছে, সেটা হয়ত ভিন্নভাবে দেখা হবে। তবে সাধারণভাবে আমার মনে হয় না যে কারো কোনো ভয়ের কারণ আছে।’

উল্লেখ্য, এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামের দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর প্রতিবাদে কলম বিরতি ও কমপ্লিট শাটডাউনসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

**এনবিআরের দুই শতাধিক কর্মকর্তা ক্ষমা চেয়েছেন

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!