আধুনিক কর একাডেমি হচ্ছে রূপগঞ্জে

বিজনেস বার্তা: দেশে কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে আয়করের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। কর আহরণ বৃদ্ধির জন্য কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজন সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ। বিসিএস (কর) একাডেমি কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে। নিজস্ব ভবন ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠার ৩১ বছর পর নিজস্ব ঠিকানা পাচ্ছে বিসিএস কর একাডেমি। ঢাকার অদূরে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে একাডেমি নির্মাণে গতকাল মঙ্গলবার একনেক সভায় ‘বিসিএস (কর) একাডেমী এর ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)’-শীর্ষক একটি প্রকল্প পাস হয়েছে।

প্রকল্প সূত্রমতে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বিসিএস কর একাডেমি। ব্যয় হবে ১১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্প এলাকা হলো নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো বিসিএস (কর) একাডেমির সার্বিক ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত এবং আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান সুবিধা নিশ্চিত করে একটি সুপ্রশিক্ষিত, দক্ষ জনবল তৈরি করা। এই প্রকল্পের আওতায় ২০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, অন্যান্য ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এনবিআরকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহে অধিকতর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১৭.১-এ কর ও রাজস্ব সংগ্রহের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার ‘টার্গেট নম্বর ১৭’ এর লক্ষ্যমাত্রা ১৭.১ অর্জনের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একাডেমির আপনালয় না থাকায় একদিকে চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রদান যেমন সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে প্রতি বছর ভাড়া হিসেবে গচ্চা যাচ্ছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। সেজন্য একটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের কর একাডেমি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নে ৪০ একর জমিতে একাডেমি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও প্রকল্পে ২০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, কর একাডেমি কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা, জ্ঞান ও জনসেবার মনোভাব বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। ফলে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম ট্রান্সফার প্রাইসিং, বেজ ইরোশন, প্রফিট শিফটিং, ক্যাপিটাল ফ্লাইট, দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি, ই-কর্মাস প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য কর একাডেমির সক্ষমতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। আধুনিক একাডেমি গড়ে উঠলে এবং পর্যাপ্ত সুবিধা থাকলে বিশ্বের নানা দেশ থেকে কর কর্মকর্তারা এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসবেন।

বিসিএস কর একাডেমির হিসাবে দেখা গেছে, বর্তমানে কর একাডেমির জন্য প্রতি মাসে ৪১ লাখ টাকার বেশি ও বছরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ভাড়া দিতে হয়। একটি উন্নত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে যেসব সুবিধা থাকা প্রয়োজন, ভাড়া বাড়ির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৭ সালে এনবিআর ও কর একাডেমির কর্মকর্তারা নারায়ণগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নে ৬০ একর জমি নির্বাচন করেন। পরে এ জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু তৎকালীন অর্থমন্ত্রী জমির পরিমাণ সংশোধনের জন্য বলেন। পরে বিসিএস (কর) একাডেমির পরিচালনা পর্ষদের সভায় কর একাডেমির নিজস্ব জমি ও ভবন নির্মাণের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) ও বিসিএস (কর) একাডেমির মহাপরিচালকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২০১৭ সালের ৬ মার্চ কায়েতপাড়া ইউনিয়নে জমি পরিদর্শন করে এবং কর একাডেমির জন্য এ জায়গা উপযুক্ত বলে মত দেয়।মতামতে বলা হয়, কর একাডেমির জন্য নির্বাচিত স্থানে পূর্বাচল ৩০০ ফুট রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তবে বালু নদীর ওপর নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ শেষ হলে রামপুরা-বনশ্রী দিয়ে যাওয়া যাবে, যার দূরত্ব হবে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। রাজধানী থেকে সহজে যাতায়াত করা যাবে। এখানে ৪০ একর জমির অধিগ্রহণ মূল্য হবে প্রায় ১২২ কোটি টাকা। তবে কমিটি কেরানীগঞ্জ উপজেলার শান্তা মৌজায় ৪০ একর জমি দেখেছে। অধিগ্রহণ মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

এনবিআরকে কর একাডেমির এক চিঠিতে বলা হয়, ভারতের নাগপুরে ন্যাশনাল একাডেমি অব ডাইরেক্ট ট্যাক্স (এনএডিটি) একটি আধুনিক একাডেমি। এটি দক্ষ কর্মকর্তা তৈরি ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। এছাড়া মালয়েশিয়া ট্যাক্স একাডেমি (এমটিএ) দক্ষ পেশাদার জনবল গড়ে তোলা ছাড়াও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানের কর কর্মকর্তা তৈরি করে আসছে। এ দুটির মতোই রূপগঞ্জে বিসিএস (কর) একাডেমি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ একাডেমিতে বড় খেলার মাঠ, প্রশাসনিক ভবন (ডিজিসহ ২৩ কর্মকর্তার জন্য অফিস কক্ষ, বিভিন্ন শাখার জন্য ১৮টি কক্ষ, ডে কেয়ার সেন্টার, মিনি কনফারেন্স রুম), একাডেমিক ভবন (বড় ক্লাসরুম ১৫টি, ছোট ছয়টি, মাঝারি চারটি, লাইব্রেরি, দুটি কম্পিউটার ল্যাব, চারটি মিনি কম্পিউটার ল্যাব, ল্যাংগুয়েজ ল্যাব, ১০০ আসনের কনফারেন্স রুম, টিচার্স রুম, কমন রুম, ভিজিটরস রুম, ডাইনিং), মসজিদ, ১০ বেডের চিকিৎসা কেন্দ্র, পুরুষ ও মহিলা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ডরমেটরি, ৫০০ আসনের অডিটোরিয়াম, ডিজি বাংলো, অফিসার্স ও স্টার্ফ কোয়ার্টার, স্কুল ও কলেজ, সুইমিংপুল, পার্কিং, টেনিস কোর্ট, বাস্কেটবল কোর্ট, পুকর, আর্কাইভ, গোডাউন, গার্ডেন, রেস্ট হাউজ ও হোটেল গড়ে তোলা হবে।

***

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!