আগামী বাজেটে কর কাঠামো যৌক্তিক করা হবে

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান করদাতাদের “ডিম পারা মুরগি” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, অতিরিক্ত চাপ দিলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি কর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, নিয়মিত করদাতাদের আইনের আওতায় কিছুটা চাপ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু তাদের পুরোপুরি বিপদে ফেলা উচিত নয়। বুধবার (২৯জানুয়ারি) ‘ডিজিটাল লেনদেনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা: প্রেক্ষিত ভ্যাট বৃদ্ধি’-শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ব্যবসা মরে যাচ্ছে, কিন্তু ব্যবসায়ী মরে যাচ্ছে না। যার একটা মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আছে, তাঁর পাঁচটি মার্সিডিজ গাড়ি লাগবে। আগামী বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না এবং কর হার যৌক্তিক করা হবে। তিনি আশ্বাস দেন যে ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হবে না এবং প্রয়োজনে ভ্যাটের হার কমানো হতে হবে।

ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ও শুল্ক-কর বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, বিশেষ করে পোশাক, জুস, বিস্কুট ও আকাশপথের টিকিটসহ বিভিন্ন খাতে। তারা পর্যটন ও ভ্রমণ টিকিটের কমিশনের ওপর অযৌক্তিক উৎসে কর কাটার বিষয়টিও তুলে ধরেন। এনবিআর চেয়ারম্যান এসব যুক্তির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য আয়কর, ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক হার যৌক্তিক করা হবে। শুল্ক-কর হারে বড় পরিবর্তন আনা হবে, তবে ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হবে না। পাশাপাশি, যেখানে শুল্ক-কর আদায়ের সুযোগ আছে, সেখানে করের জাল সম্প্রসারণ করা হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান উদাহরণ দিয়ে বলেন, কর ব্যবস্থা সবার জন্য সমান হবে, কেউ বারবার কর দেবেন, আর কেউ কর ফাঁকি দেবেন—তা হবে না। তিনি উদাহরণ দিয়ে জানান, এক ব্যবসায়ী কর ফাঁকি দিতে রিসোর্টের তিনটি পুকুরে ৫০০ কোটি টাকার মাছ দেখিয়েছেন, যা কর নথিতে ধরা পড়েছে। তিনি স্বীকার করেন যে, বাজেটের আকার বাস্তবতার চেয়ে বড় হয়ে গেছে এবং রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতার ভিত্তিতে বাজেট নির্ধারণ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, বাড়তি রাজস্ব চাপ নিয়মিত করদাতাদের ওপর পড়ে। ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনায় এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।

ভ্যাটের চালান নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কিছুদিন আগে একটি বড় মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনলাম। বিল পরিশোধের সময় আমাকে ভ্যাটের চালান দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে দোকানি জানান, ভ্যাটের মেশিন কাজ করে না, মাঝে মাঝে ডিস্টার্ব করে।’ তিনি আরও বলেন, বাজারে গেলে মনেই হয় না দেশে ভ্যাট বলে কিছু আছে; এতে যারা নিয়মিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান, তারা চাপে পড়ে যায়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা উপস্থিত ছিলেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!