বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) বা ট্যারিফ কমিশন ইলিশের আকার অনুযায়ী সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। স্থানীয় বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করেই এই সুপারিশ প্রকাশ করা হয়েছে। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ট্যারিফ কমিশন ইলিশ মাছের দরদামের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি ইলিশের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে বাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় ট্যারিফ কমিশন এই সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে। চলতি সেপ্টেম্বরে ইলিশের কেজিপ্রতি দাম ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে বলে জানিয়েছে কমিশন। ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান বলেন, এখন এক কেজি ইলিশ মাছ কিনতে তিন কেজি গরুর মাংসের সমমূল্য দিতে হচ্ছে, যেখানে আগে এক কেজি গরুর মাংসের দামে তিন কেজি ইলিশ মাছ কেনা যেত। ইলিশের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, তাই খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করা জরুরি। এতে প্রান্তিক জেলেরা লোকসান থেকে রক্ষা পাবেন।
তার মতে, ইলিশ প্রায় শতভাগ দেশীয় পণ্য হলেও বাজারে এর দামের পেছনে কৃত্রিমতার সংযোগ রয়েছে। কেননা, এর আহরণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা ডলারের ওঠানামার তেমন প্রভাব নেই। সমীক্ষায় চিহ্নিত মূল জায়গা হলো আহরণ–পরবর্তী মধ্যস্বত্বভোগীদের নানা স্তর ও তাদের অতিরিক্ত মুনাফা। মূলত দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজি মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বেশি ভূমিকা রাখছে।
ট্যারিফ কমিশন আরও বলেছে, স্থানীয় বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে ইলিশ রপ্তানি হয়। সেপ্টেম্বরে স্থানীয় বাজারে এক কেজি ইলিশের দাম সর্বনিম্ন ৯০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ দাম ২ হাজার ২০০ টাকা। অন্যদিকে চলতি মাসে ভারতে রপ্তানি করা এক কেজি ইলিশের দাম পড়েছে গড়ে ১ হাজার ৫৩৪ টাকা। এ পর্যন্ত ৯৭ টনের বেশি ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান রপ্তানি মূল্যে যদি ব্যবসায়ীরা মুনাফা করতে পারেন, তাহলে স্থানীয় বাজারের মূল্যে ব্যবসায়ীরা উৎপাদন মূল্যের (সংগৃহীত মূল্য) তুলনায় অস্বাভাবিক হারে মুনাফা করছেন।
ইলিশের দাম বাড়ার ১১ কারণ
ইলিশের দাম বাড়ার ১১টি কারণ চিহ্নিত করেছে ট্যারিফ কমিশন। এগুলো হলো: চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, মজুত ও সিন্ডিকেট, জ্বালানি তেল ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, মাছ ধরার খরচ বৃদ্ধি, নদীর নাব্যতা সংকট ও পরিবেশগত সমস্যা, অবৈধ জাল ব্যবহার, দাদন, বিকল্প কর্মসংস্থান অভাব, নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এবং রপ্তানির চাপ।