আওয়ামী সরকারের সমর্থনে ‘ব্যাংক চুরি’: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ‘উৎসাহ আর সমর্থনে ব্যাংক থেকে টাকা চুরির’ ঘটনা ঘটেছিল বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “দুর্নীতি একেবারে সম্পূর্ণ বন্ধ করা খুবই কঠিন। আমাদের ব্যাংকগুলো থেকে যে টাকা চুরি হয়েছে, এটা কিন্তু ঘটনাক্রমে হয় নাই। এটা সর্বোচ্চ জায়গা থেকে উৎসাহের কারণেই কিন্তু পেরেছে। পত্রপত্রিকায় উঠেছে, সবাই বলাবলি করেছে যে, অমুক ব্যাংকটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, একটা ভালো ব্যাংক থেকে সমানে খারাপ ঋণ দেওয়া হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে। সর্বোচ্চ জায়গা থেকে যদি তাদের প্রতি সমর্থন না থাকত, তাহলে এটা সম্ভব হত না।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সে সরকারের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের অনিয়মের তথ্য অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সামনে আসতে শুরু করেছে।

সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, অনেক প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠী ও প্রতাপশালী ব্যবসায়ী ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেসব ব্যাংক থেকে কোটি কোটি বের করে নিয়েছেন। তারা ব্যাংকের সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলছেন, আগের সরকারের সময়ে ১৭ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে। তিনটি বিদেশি নিরীক্ষক কোম্পানিকে ওই ‘ব্যাংক ডাকাতি’ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

বিদেশগামী শিক্ষার্থী ও প্রবাসীদের বিভিন্ন কাগজত্রের ‘সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সত্যায়ন কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন হলে দুর্নীতি কমাতে এটা বড় রকমের পদক্ষেপ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সার্বিক কার্যক্রমের মাধ্যমে কোনো দেশের ভাবমূর্তি তৈরি হয় মন্তব্য করে তৌহিদ হোসেন বলেন, “ইমেজ একদিনে সৃষ্টি হয় না, একদিনে শেষও হয় না। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে যারা মারা যায়, তাদের সংখ্যা আমাদের যখন সবচেয়ে বেশি হয়ে যায়, ইমেজ কিন্তু তখন আপনি ভালো ভালো কথা বলে রক্ষা করতে পারবেন না। আবার যখন আপনার একজন ট্যাক্সিচালক টাকা পেয়ে ফেরত দেয়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ইমেজ বেড়ে যাবে। আপনার এমপি যখন দুর্নীতির দায়ে জেলে যায়, আরেক দেশে গিয়ে, আপনার ইমেজ রক্ষা করা সেখানে খুব কঠিন।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সার্বিকভাবে আমরা যেটা করব, সেটা আমাদের ইমেজ হবে। হুট করে একটা কিছু দিয়ে হবে না। কিন্তু ছোট ছোট পদক্ষেপ আমাদের সেখানে নিয়ে যেতে পারে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টেও (এমআরপি) জালিয়াতির সুযোগ থাকার বিষয় জেনে অবাক হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “একেবারে অল্প কয়দিন আগে জানলাম যে আসলে একই ব্যক্তি দুই, তিন, চারটা পাসপোর্টও নিয়েছে, এমআরপি চারটাই। অর্থাৎ সমস্যা থাকতে পারে, প্রযুক্তিগত উন্নতির মধ্যেও। আমরা নতুন ধাপে আসতেছি, ডিজিটাল পাসপোর্টের দিকে চলে যাচ্ছি। সমস্যা হয়ত চলে যাবে।”

বাংলাদেশের বিদেশি মিশনগুলোকে দেখলে ‘পাসপোর্ট অফিস’ মনে হয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যে মিশন দিনে ৩০০ পাসপোর্ট ইস্যু করবে, তার পক্ষে অন্য কোনো সেবা দেওয়া সম্ভব, পাঁচজন, সাতজন অফিসার-স্টাফ মিলিয়ে? এমনকি আমাদের এখানে নৈশপ্রহরী হিসেবে যায়, সেও পাসপোর্টের কাজ করতেছিল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!