আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যাতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তাদের অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। শনিবার (১০ মে) রাতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে শনিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত বিশেষ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে যমুনা ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সভার সিদ্ধান্তসমূহ সাংবাদিকদের জানান আইন বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং মো. মাহফুজ আলম।
লিখিত বক্তব্যে আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে টানা তিন দিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং ছাত্র-জনতা লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গতকাল রাতে জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে ১৯৭৩ সালে প্রণয়ন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। পরে সেই সময়ের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান দমন করতে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে মামলা হয়।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংঘটিত গণহত্যা ও গুমের অভিযোগগুলোর বিচারে উদ্যোগ নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে। এজন্য গত নভেম্বরে সংশোধন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন। সর্বশেষ, রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করে এই আইনের সংশোধনী খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।