ছাত্র জনতার আন্দোলনের কারণে বেশ কিছুদিন সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিলো। যার ফলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর আইসিডিতে কোনো কন্টেইনার আসতে পারেনি। এতে আমদানি করা পণ্যের বহু কন্টেইনার আইসিডিতে আনা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাব অনুযায়ী, ২০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত আইসিডিগামী ১৮৫৬ কন্টেইনার আটকা পড়ে। এসব কন্টেইনার সময়মত আইসিডিতে না আসায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে আমদানিকারকরা। তবে আমদানিকারকদের অনুরোধ আর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেয়ার ফলে জটিলতা নিরসন হচ্ছে। আইসিডিগামী এসব কন্টেইনার আমদানিকারকরা চট্টগ্রাম বন্দর ও পানগাঁও আইসিটি থেকে খালাস নিতে পারবে। এনবিআর থেকে এই ধরনের অনুমতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সোমবার (২৬ আগস্ট) এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে দেশব্যাপী রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এর ফলে রেলযোগে ঢাকা আইসিডি ঘোষিত আমদানি কন্টেইনারসমূহ চট্টগ্রাম বন্দর হতে আইসিডি কমলাপুর, ঢাকায় আনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে জাহাজ হতে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার অবতরণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ সচল থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর প্রান্তে ঢাকা আইসিডিগামী বিপুল পরিমাণ কন্টেইনার জমে যায়। এতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ঢাকা আইসিডি ঘোষিত আমদানি কন্টেইনারসমূহ পণ্য বা কার্গো ঘোষণা সংশোধনের মাধ্যমে ঢাকা আইসিডির পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দর বা পানগাঁও, আইসিটি হতে ডেলিভারি প্রদানের অনুমতির জন্য অনুরোধ জানিয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়। এই চিঠি অনুযায়ী ২২ আগস্ট এই বিষয়ে অনুমতি প্রদান করে বন্দর ও কাস্টমকে চিঠি দেয় এনবিআর। যাতে বলা হয়, এনবিআর অনতিবিলম্বে উদ্ভূত পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে ২২ আগস্ট আমদানিকারকের অভিপ্রায় অনুযায়ী এই সময়ে আমদানি করা মোট ১৮৫৬টি কন্টেইনার চট্টগ্রাম, আইসিডি কমলাপুর, আইসিডি পানগাঁও এর যেকোন একটি বন্দর হতে খালাসের অনুমতি প্রদান করে। এর ফলে আশা করা যায়, চলমান কন্টেইনার জট শীঘ্রই অনেকটা নিরসন হবে এবং পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
আরও বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং এ থেকে উত্তরণে এরূপ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ উৎপাদনমুখী শিল্প থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে সাপ্লাই চেইনকে নিরবিচ্ছিন্ন রাখা তথা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এনবিআর প্রতিশ্রুতিকে পুনঃব্যক্ত করে। একই সাথে ভবিষ্যতেও যেকোন রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে নীতি সহায়তা প্রদানে এবং দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজস্ব জোগানে অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা পালনে এনবিআর একইভাবে সচেষ্ট থাকবে।
এনবিআর সূত্রমতে, ১৩ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডে চাকা আইসিডিগামী কন্টেইনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরবর্তী তিন মাস ঢাকা আইসিডির পরিবর্তে কন্টেইনারসমূহ নৌ-রুটে পানগাঁও প্রেরণ অথবা আইজিএম সংশোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি দেওয়ার গেজেট প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা আইসিডিগামী কন্টেইনার জাহাজ যোগে চট্টগ্রাম বন্দরে আগমনের পর তা রেলযোগে কমলাপুর আইসিডিতে পাঠানো হয়। দেশের বিরাজমান বিশেষ পরিস্থিতিতে ২০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়াগন সরবরাহ বন্ধ রাখে। এ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ও কন্টেইনার ওঠানামা স্বাভাবিক ছিল। ফলশ্রুতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ৮৭৮ টিইইউএস এর স্থলে ২০৭৮ টিইইউএস ঢাকা আইসিডিগারী কন্টেইনার জমে যায়। এছাড়া আরো আনুমানিক ৬০০ টিইইউএস ঢাকা আইসিডিগামী কন্টেইনার জাহাজ হতে খালাসের অপেক্ষায় আছে। এতে আমদানিকারকরা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের আমদানি কন্টেইনার গ্রহণ করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
অপরদিকে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বন্দরের চিঠি পাওয়ার পর এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ১৮ জুলাই এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়। সে অনুযায়ী এনবিআর থেকে অনুমতি দিয়ে ২৬ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
***