আইপিও ফান্ড ও এজিএমে জালিয়াতিতে একমি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড আইপিও তহবিল থেকে সংগ্রহ করা কোটি কোটি টাকা নির্ধারিত খাতে ব্যবহার না করে আত্মীয়স্বজন ও পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের কোনো তথ্য জানানো হয়নি। এখনো অর্থ আদায় না হলেও কাগজে খেলাপি হিসেবেও তা দেখানো হয়নি।

এ ছাড়া কোম্পানির মূলধন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি, কারখানা নির্মাণে জালিয়াতি এবং প্রসপেক্টাসে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদর্শনের প্রমাণ মিলেছে। এসব অনিয়ম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। সে জন্য আইপিও ফান্ড ব্যবহারের মেয়াদ বাড়াতে কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের ভোট চুরি করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। বিএসইসি ও ডিএসইর তদন্তে এসব অনিয়ম প্রকাশ পেয়েছে।

তদন্তে উঠে এসেছে, গত বছরের ১০ জুন অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) আইপিও ফান্ড ব্যবহারের মেয়াদ বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের সম্মতি প্রয়োজন ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, উদ্যোক্তা ও পরিচালক বাদে অন্তত ৫১ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর সমর্থন থাকতে হতো। কিন্তু পর্যাপ্ত সমর্থন না পেয়ে কোম্পানি জালিয়াতির পথে হাঁটে। তারা ২৮টি ভুয়া আইপি আইডি ব্যবহার করে ১ হাজার ২৪৬ বিনিয়োগকারীর নামে ভোট প্রদান করে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, একটি আইপি থেকেই সর্বোচ্চ ১২১ জনের ভোট দেওয়া হয়েছে। এই ভুয়া ভোট হিসাব করে মোট ৪ কোটি ৭ লাখ শেয়ারের মালিকানা দেখানো হয় এবং সেই ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব পাস করিয়ে নেয় কোম্পানি।

ভোট চুরির মাধ্যমে অনুমোদন পাওয়া ওই অ্যাজেন্ডা ছিল আইপিও তহবিল ব্যবহারের মেয়াদ বৃদ্ধি। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে কোম্পানি অর্থ ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট আকারে রেখেছিল। পরে ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর সেই আমানতকে বন্ধক রেখে শান্ত অ্যাগ্রো অ্যান্ড ট্রেডিং ফার্মসকে ১৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। একইভাবে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা-উর-রহমান সিনহার ছেলের প্রতিষ্ঠানে এফডিআর ভেঙে ৭ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। বর্তমানে এই ঋণ ফেরত আসেনি এবং কাগজে খেলাপি হিসাবেও দেখানো হয়নি।

অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। তদন্তে ধরা পড়ে, ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে কোম্পানি হঠাৎ ৯৭ শতাংশ বা ১০৫ কোটি টাকা মূলধন বৃদ্ধি করেছে, যার যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। প্রসপেক্টাসে স্বতন্ত্র পরিচালককে নিয়ে তথ্যও বিভ্রান্তিকর—কোনো জায়গায় বলা হয়েছে তিনি অন্য কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত নন, আবার অন্য জায়গায় বলা হয়েছে তিনি অন্য কোম্পানির পরিচালক। কারখানা নির্মাণেও জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রসপেক্টাসে ভবন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ২০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় দেখানো হলেও তদন্তে দেখা যায় শুধু কয়েকটি ভাঙাচোরা ভবন আছে। কোম্পানি দাবি করেছে কোয়ান্টাম ইন্টারন্যাশনালকে ৫ কোটি টাকা, বন্ধন এন্টারপ্রাইজকে আড়াই কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার কোনো প্রমাণ মেলেনি। নতুন কারখানা ও যন্ত্রপাতি অধিগ্রহণের জন্য ৮ কোটি টাকার অগ্রিম প্রদানের কথাও সত্য হয়নি।

অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, একমি পেস্টিসাইডসের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বহু কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে আইপিও তহবিল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। ভোট চুরি করে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করার এই ঘটনা তার মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য উদাহরণ।

বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক আবুল কালাম বলেন, তদন্তে যে অনিয়মগুলো ধরা পড়েছে, সেগুলো প্রমাণিত হলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশন কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!