অর্থপাচার ব্যাংক ও কাস্টমসের ব্যর্থতা: চেয়ারম্যান

ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থপাচার হওয়ার ঘটনাকে ব্যাংক ও কাস্টমসের সামষ্টিক ব্যর্থতা (কালেক্টিভ ফেইলিউর) বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। শনিবার (২৬ জুলাই) এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের মাধ্যমেই প্রত্যাশিত রাজস্ব আহরণ সম্ভব’-শীর্ষক বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেক সফটওয়্যার এবং ডাটা কালেক্টিভ এজেন্সি আছে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে কোন পণ্যের কত দাম, তা খুব সহজেই জানা সম্ভব। ব্যাংকগুলো এলসি (ঋণপত্র) খোলার সময় কত দামে এলসি খুলছে আর আন্তর্জাতিক বাজারে ওই পণ্যের দাম কত, একটু দেখে নিলেই তা জানতে পারে। ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও কাস্টমস বিভাগের রেগুলেশনের ফেইলিউর আছে। আন্ডার ইনভয়েসিং প্রতিরোধে এনবিআর মিনিমাম ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু এতে সৎ করদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।’

কর ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতিই বড় বাধা- এমন মন্তব্য করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশে কর সম্পর্কে তেমন কোন শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। কেবল উচ্চ শিক্ষায় দুই-একটি বিষয়ে কর শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত আছে। কর শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রে কর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

NBR CM Debate 1

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন সঠিকভাবে না হলে কর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণেই কর প্রশাসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হচ্ছে। যে পরিমাণ কর আদায় হয় তার চেয়ে বেশি কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমরা কর আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে সরকার চাইলেই আর কর অব্যাহতি দিতে পারবে না। জাতীয় স্বার্থে শুধু সংসদ অর্থ বিলের মাধ্যমে কর অব্যাহতির বিষয় বিবেচনা করতে পারবে।

মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘শুধু রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা বিভাগ করলেই রাজস্ব আহরণ বাড়বে না। এজন্য কর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আর শুধু সংস্কার কমিটি করলেই হবে না। সংস্কারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা না হলে রাজস্ব আহরণে সুফল আসবে না।’ পলিসি বাস্তবায়নে এনবিআরের ঘাটতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এনবিআরে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা পাওয়ার কারণেই বিভিন্ন বোল্ড (সাহসী) সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।’

রাজস্ব আহরণে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মেশিনের ব্যবহার বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা ডিজিটালি র‌্যানডম পদ্ধতিতে ১৫ হাজার ৪০০ ফাইল অডিটের জন্য বাছাই করেছি। এনবিআর এখন অটোমেশনের উপর জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো-তে অনলাইনে আবেদন করে এক ঘণ্টারও কম সময়ে প্রায় ৫ লাখের বেশি আবেদনকারী সেবা পেয়েছেন। গত বছর ১৭.১২ লাখ টিআইএনধারী অনলাইনে রিটার্ন সাবমিট করেছেন, এ বছর সবার জন্য অনলাইনে রিটার্ন সাবমিট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে’।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহামেদ চৌধুরী কিরণের সঞ্চালনায় বিতর্ক অনুষ্ঠানে সংস্কারের পক্ষে সরকারি দল হিসেবে অংশ নেয় গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং বিপক্ষে বিরোধী দল হিসেবে অংশ নেয় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ। বিচারকদের রায়ে সরকারি দল জয়লাভ করে। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা ও সাংবাদিক আবুল কাশেম। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

** বাণিজ্যের আড়ালে ৭৫ শতাংশ অর্থপাচার হয়
** অডিট দুর্বলতায় অর্থপাচার ও ঋণ খেলাপি বেড়েছে
** মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আড়ালে দম্পতির অর্থপাচার
** অর্থপাচারে অভিযুক্ত ৩৭৮ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
** এক ডলারে ৯ কেজি পোশাক শুল্কায়ন, অর্থপাচার
** ৪ প্রতিষ্ঠানের এক এমডি, করছেন করফাঁকি-অর্থপাচার
** অর্থ পাচারকারীদের সঙ্গে সমঝোতার ইঙ্গিত সরকারের
** রপ্তানির ছলে ১৫০০ কোটি টাকা পাচার
** দুবাইয়ে প্রপার্টি ক্রয়: ৭০ ভিআইপির তালিকা এনবিআরে
** মেঘনা গ্রুপের এক লাখ কোটি টাকা পাচার
** পাচারের টাকায় দুবাইয়ে বাপবেটার অট্টালিকা
** পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে তিন সংস্থার জোট
** ১৩ প্রতিষ্ঠানের পাচার ৪১৮ কোটি টাকা
** এস আলম : ২ এলসিতেই পাচার ১০ হাজার কোটি টাকা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!