জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য সরকার তিনটি শ্রেণিতে সুবিধা দেবে। প্রথম ক্যাটাগরিতে গুরুতর আহতদের এককালীন ৫ লাখ টাকা ও মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা, দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে এক অঙ্গহানি হওয়া ব্যক্তিদের এককালীন ৩ লাখ টাকা ও ১৫ হাজার টাকা মাসিক ভাতা দেওয়া হবে। তৃতীয় ক্যাটাগরিতে সামান্য আহত ব্যক্তিরা চাকরি ও পুনর্বাসনে অগ্রাধিকার পাবেন, তবে তাঁদের ভাতা দেওয়া হবে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম আজ সাংবাদিকদের জানান, এই সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে।
অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতিটি পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল। কীভাবে সেই টাকা দেওয়া হবে, তা জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে প্রতিটি শহীদ পরিবারকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করে দেওয়া হবে। বাকি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ের মধ্যে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই ৩০ লাখ টাকা শুধু শহীদ পরিবারের জন্য।
উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে খ্যাত হবেন। এই নিরিখে তাঁরা সনদ পাবেন, পরিচয়পত্র পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁরা জুলাই যোদ্ধা নামে অভিহিত হবেন। তাঁরা এই নিরিখে পরিচয়পত্র পাবেন, সরকারি সুবিধা পাবেন। তাঁরা আজীবন এই সুবিধা পাবেন। ভাতাও পাবেন।
জুলাই অধিদপ্তরের কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হতে পারে, এমনটি জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বর্তমানে অধিদপ্তরের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং এই সপ্তাহের মধ্যে অথবা শিগগিরই অধিদপ্তর আত্মপ্রকাশ করবে। নীতিমালাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। উপদেষ্টা আরও বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সরকারিভাবে অধিদপ্তর পরিচালনা করছে, এবং আগামী নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁরা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা নিয়ে আসবেন। আশা করি, তাঁরা এই ধারা অব্যাহত রাখবেন।”
মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক-ই-আজম বলেন, অনেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন জায়গায় অমুক্তিযোদ্ধারা রয়েছেন। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন এবং ডিসিরা তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ করেছেন। ডিসিরা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চেয়েছে, এবং তারা জানিয়েছেন যে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে, জেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করা হবে, যাতে অমুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
টিন,কম্বল এখন থেকে স্থানীয়ভাবে কেনা হবে
ফারুক-ই-আজম, যিনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টা, সাংবাদিকদের জানান যে, এখন থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রমের উপকরণ স্থানীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করা হবে। আগে এসব কেন্দ্রীয়ভাবে কেনা হতো, তবে এখন থেকে সুবিধাভোগীদের কাছে দ্রুত পৌঁছানো, বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্থানীয়ভাবে কেনাকাটা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) এসব মালামাল কিনবেন, এবং প্রতি উপজেলায় এ খাতে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।তিনি আরও জানান, পূর্বে কম্বল, টিনসহ অন্যান্য উপকরণ কেন্দ্রীয়ভাবে কেনা হয়ে মাঠে পাঠানো হতো, তবে এখন থেকে এসব সরাসরি মাঠ পর্যায়ে সংগ্রহ করে বিতরণ করা হবে। গৃহনির্মাণে টিনও স্থানীয়ভাবে চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া হবে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো মালামাল রাখা হবে না। ডিসিদের জানানো হয়েছে যাতে তারা স্পেসিফিকেশন অনুসারে উপকরণ কিনে বিতরণ করেন এবং গৃহহীনদের গৃহনির্মাণে বৈষম্য সৃষ্টি না হয়।
ডিসিরা টিন কি সরাসরি কিনবেন নাকি দরপত্র ডাকা হবে—এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ইউএনওরা সরাসরি কিনতে পারবে। আগের পদ্ধতিতে কী সমস্যা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে উপকরণ কেনার সময় দেখা যায়, একই জায়গা থেকে উপকরণ কেনাকাটা করা হচ্ছে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য কেনাকাটায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এমনকি যারা টিন উৎপাদন করত, তারাও অংশগ্রহণ করতে পারত না। এখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সরাসরি উপকরণ কিনে সরবরাহ করবে।
উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম জানান, ইউএনও এখন থেকে পিপিআর অনুসরণ করে সরাসরি কেনাকাটা করবেন, যা আগে কেন্দ্রীয়ভাবে করা হতো। এতে অতিরিক্ত খরচ কমবে এবং সাশ্রয় হবে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় পুনর্বাসন কার্যক্রমের জন্য টিআর, কাবিখা ও কাবিটায় বরাদ্দ দেওয়া অর্থ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়া নিশ্চিত করতে ডিসিদের পর্যবেক্ষণ বাড়ানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।