‌‘অপো’ দেয় শুল্ককর ফাঁকি

  • ## অপোর বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘোষণায় ২০০০ হাজার মোবাইল ফোন সেট আমদানি করার অভিযোগ
    ## ২০১৮ সালে আমদানি করা এই মোবাইলের শুল্ককরসহ মোট মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা
    ## অপো কোন বিল অব এন্ট্রি বা তথ্য দেয়নি কাস্টমস গোয়েন্দাকে, ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে

শাহেদ রাসেল, বিশেষ প্রতিনিধি: এক বা দুইটি নয়, দুই হাজার মোবাইল ফোন সেট আমদানি করা হয়েছে। তাও আবার আমদানি করা হয়েছে মিথ্যা ঘোষণায়। আমদানি করা এই সেটের প্রতি ইউনিটের মূল্য ৯৬ ডলার করে। আমদানি করা এসব মোবাইল সেট বৈধভাবে আমদানি করা হয়নি। দেখাতে পারেনি বৈধ কোন বিল অব এন্ট্রি। মোবাইল ফোন সেট আমদানিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড অপো’র বিরুদ্ধে এমন অনিয়মের তথ্য পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একটি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআরের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে এমন অনিয়ম উঠে এসেছে। অপোর মতো কোম্পানি মিথ্যা ঘোষণা ও শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে মোবাইল সেট আমদানি করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে অপোর পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা করা হয়নি বলে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইক্যুইপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সকল আইন ও বিধির প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল এবং অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে এ দেশের সকল আইন ও বিধি অনুসরণ করে আসছি। বিগত বছরগুলোতে আমরা বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করে আসছি, লোকালাইজড কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে কাজ করছি। কেননা, আমরা বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতে বিশ্বাসী করি এবং এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোনো ক্ষেত্রে অমীমাংসিত কোনো বিষয় থাকলে তা সমাধানে আমরা সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে সক্রিয় যোগাযোগ বজায় রাখছি। এবং এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপনাদের জানানো হবে।’

সূত্রমতে, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড অপো। বাংলাদেশের স্মার্টফোনের বাজারে যেসব চীনা ব্র্যান্ড খুব অল্প সময়ে ভালো করেছে তার একটি হলো অপো। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে অপো।

এনবিআর সূত্রমতে, মোবাইল হ্যান্ডসেট কোম্পানি অপোর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চোরাচালান, আন্ডার ইনভয়েসিং, মিথ্যা ঘোষণা ও শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন মডেলের মোবাইল সেট আমদানি করে আসছে বলে তথ্য পায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিশেষ করে ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে অপো এই মোবাইল সেটগুলো আমদানি করে আসছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। সে অনুযায়ী অনুসন্ধান করতে একটি দল গঠন করা হয়। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড থেকে অপো বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইক্যুইপমেন্ট কোং নামের প্রতিষ্ঠানের হ্যান্ডসেট আমদানির তথ্য নেয়। এছাড়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাওয়া আরো কিছু তথ্য আমদানির তথ্যের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে যাচাই করেন কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। যাতে মিথ্যা ঘোষণা ও শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির তথ্য বেরিয়ে আসে। সে অনুযায়ী অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করে কাস্টমস গোয়েন্দার প্রধান কার্যালয়ে জমা দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড ও বিটিআরসি থেকে অপোর সেট আমদানির তথ্য নিয়ে তা যাচাই ও পর্যালোচনা করা হয়। যাতে দেখা যায়, ২০১৮ সালে অপো ১৮০৩ মডেলের ২ হাজার অপো ব্রান্ডের মোবাইল সেট আমদানি করেছে। এসব ফোন সেট মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আমদানি করেছে। এসব সেটের প্রতি ইউনিটের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ছিলো ৯৬ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৭ হাজার ৯৬৮ টাকা (ডলার মূল্য ৮৩ টাকা)। আর প্রতি ইউনিটের শুল্কহার ছিলো ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ। সে অনুযায়ী দুই হাজার সেটের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য এক কোটি ৬২ লাখ ৫৬ হাজার ৩১৪ টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর হলো ৪৬ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯ টাকা।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আমদানি করা এই মোবাইল সেটের বিল অব এন্ট্রি দাখিল করতে অপো কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা কোনভাবেই তা দাখিল করেননি এবং অনুসন্ধানের সময় কোন সহযোগিতা করেননি। তবে কর্মকর্তারা অনুসন্ধানে জানতে পারেন, অপো এসব মোবাইল সেট শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করেছে। আমদানির স্বপক্ষে কোন দলিলাদি দাখিল করতে না পারায় আমদানি করা এসব মোবাইল সেট কাস্টমস আইন, ১৯৬৯ এর ধারা-৩২ লংগন করে মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে আমদানি করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। অপরদিকে, অপো কাস্টমস গোয়েন্দাকে এ বিষয়ে কোন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেনি। কাস্টমস গোয়েন্দা বিটিআরসি থেকে নেয়া তথ্যে দেখতে পায়, অপো মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা এসব মোবাইল সেট বিটিআরসিতে প্রদর্শন করেছে। মিথ্যা ঘোষণায় মোবাইল সেট আমদানি করায় অপোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।

কাস্টমস গোয়েন্দা সূত্রমতে, মিথ্যা ঘোষণায় মোবাইল সেট আমদানি করায় প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকা কাস্টম হাউসে প্রেরণ করে কাস্টমস গোয়েন্দা। সে প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা কাস্টম হাউস কমিশনার চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি অপো বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইক্যুইপমেন্ট কোং ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর ‘দাবিনামা সম্বলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি’ করেন। নোটিশে বলা হয়, যেহেতু কাস্টমস ডাটায় প্রদর্শিত তথ্যের চেয়ে বিটিআরসির ডাটায় প্রদর্শিত ১৮০৩ মডেলের ২ হাজার পিস মোবাইল সেট অতিরিক্ত পাওয়া গেছে, যা অসত্য বা মিথ্যা ঘোষণায় কাস্টমস আইন লংগন করে শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে আমদানি হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠিত। সে অনুযায়ী আমদানিকারক অপোর নিকট হতে এই হ্যান্ডসেটের উপর প্রযোজ্য শুল্ককর আদায়ে কেন প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা ৩০ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশ দেয়া হলো। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্রমতে, অপো ৩০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেয়নি। পরে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় আবারো কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। যাতে জবাব দিতে সাতদিন সময় দেয়া হয়। অন্যথায় প্রতিবেদন ও দলিলাদির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অপোর মতো কোম্পানি মিথ্যা ঘোষণায় সেট আমদানি করেছে। তথ্য চাওয়ার পর কোন সহযোগিতা করেনি। অপো আর কোন বিল অব এন্ট্রিতে মিথ্যা ঘোষণায় সেট আমদানি করেছে কিনা-তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

###

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!