অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের ভ্যাট দিচ্ছে না গ্রামীণফোন

বাংলাদেশ রেলওয়ের অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক (ওএফসি) ব্যবহার করে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন লিমিটেড। এ অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহারের জন্য গ্রামীণফোন রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ভাড়ার সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধের কথা থাকলে গ্রামীণফোনের। কিন্তু চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে এ ভ্যাট পরিশোধ করছে না কোম্পানিটি। প্রতিষ্ঠানটির কাছে এ বাবদ বিপুল পরিমাণ ভ্যাট বকেয়া পড়লেও অজুহাত দেখিয়ে তা অপরিশোধিত রাখা হয়েছে। এ ভ্যাট আদায়ে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে রেলওয়ে। সম্প্রতি এ চিঠি দেওয়া হয়। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশন সৈয়দ তালাত কামাল বিজনেস বার্তাকে বলেন, ‘একটি ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে যে কোনো ভ্যাট পরিশোধের বিপরীতে গ্রামীণফোনকে ভ্যাট চালান দিতে বাধ্য। কিন্তু তারা ভ্যাট পরিশোধ করতে বললেও গ্রামীণফোনকে ভ্যাট চালান বা এনবিআর অনুমোদিত কোনো চালান দিচ্ছে না। গ্রামীণফোন বারবার অনুরোধ করার পরও রেলওয়ে কোনো চালান দেয়নি। তাই গ্রামীণফোন রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তির ২১তম বছরের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিক ও ২২তম বছরের প্রথম প্রান্তিকে পরিশোধিত ভাড়ার সঙ্গে ভ্যাট প্রদান বন্ধ রেখেছে। ভ্যাট চালানের মাধ্যমে ভ্যাট দাবি করা মাত্রই গ্রামীণফোন অপরিশোধিত ভ্যাট পরিশোধ করে দেবে।’

গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিএসটিই (টেলিকম) আহমেদ ইশতিয়াক জহুর সই করা চিঠি এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট নীতি) বরাবর পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও গ্রামীণফোন লিমিটেডের মধ্যে অপটিক্যাল ফাইবার লিজসংক্রান্ত চুক্তি মোতাবেক গ্রামীণফোন রেলওয়েকে নির্ধারিত গ্র্যান্টেড অ্যানুয়াল রেন্টাল (জিএআর) বা ভাড়া প্রদান করে। চুক্তির শর্ত মোতাবেক গ্রামীণফোন ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ হারে উৎসে ভ্যাট নিয়মিত পরিশোধ করে আসছে। ইজারা সংক্রান্ত বিধিবিধান অনুযায়ী রেলওয়ে গ্রামীণফোনকে এনবিআরের নির্দেশনা মোতাবেক সার্টিফিকেট ইস্যু করে আসছে। সম্প্রতি গ্রামীণফোন রেলওয়েকে ভ্যাট চালান ইস্যু না করার কারণ দেখিয়ে গত ২১তম চুক্তি বছরের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির ভাড়া ভ্যাট ছাড়াই রেলওয়েকে প্রদান করে। এ বিষয়ে রেলওয়ে এনবিআরের নির্দেশনা চেয়ে চিঠি দেয়। এনবিআর রেলওয়েকে ভ্যাট আদায়ের জন্য নির্দেশনা দেয়। এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী ২১তম চুক্তি বছরের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অপটিক্যাল ফাইবারের নির্ধারিত ভাড়া এর ওপর প্রযোজ্য ১৫ শতাংশ বকেয়া ভ্যাট পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু গ্রামীণফোন এনবিআরের নির্দেশনা ও রেলওয়ের অনুরোধ উপেক্ষা করে রেলওয়েকে শুধু ভাড়া পরিশোধ করে। তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত গ্রামীণফোনের কাছে বকেয়া ভ্যাট প্রায় ১০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২২তম চুক্তি বছরের প্রতি কিস্তিতে (প্রতি তিন মাসে) গ্রামীণফোনের কাছে আদায়যোগ্য ভ্যাট প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। এছাড়া চুক্তি মোতাবেক প্রতি বছরে বর্ধিত হারে কিস্তিভিত্তিক প্রাপ্য হবে।

উল্লেখ্য, রেলওয়ে ও গ্রামীণফোন এর মধ্যে চুক্তির মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত রয়েছে। গ্রামীণফোন ভ্যাট পরিশোধে গড়িমসি করছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এ ভ্যাট আদায় বা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে নিজস্ব অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক (ওএফসি) ভাড়া প্রদানের জন্য চুক্তি প্রদান করে। সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নে ১৯৮৭-৯২ পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে রেললাইনের সমান্তরালে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। নরওয়ে সরকারের আর্থিক অনুদানে এ ব্যবস্থা চালু করা হয় মেইন লাইন সেকশনে। এতে দুই হাজার ১০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রেলওয়ের ৩০০ স্টেশন সংযুক্ত হয়। সে সময় সক্ষমতার বড় অংশই অব্যবহৃত ছিল। এজন্য ১৯৯৭ সালে গ্রামীণফোনকে অপটিক্যাল ফাইবার ইজারা দেয় রেলওয়ে। ২০০৪ সালে এ চুক্তি সংশোধন করা হয়। আর ২০০৭ সালে আবারও চুক্তি নবায়ন করা হয়, যার মেয়াদ ছিল ২০১৭ সাল পর্যন্ত। এরপর চুক্তি নবায়ন করে, যার মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত। ফাইবার অপটিক ভাড়াবাবদ প্রতি বছর রেলওয়েকে ১০৬ কোটি টাকা ভাড়া প্রদান করছে গ্রামীণফোন। রেলওয়ের কাছ থেকে নেওয়া প্রতি মিটার অপটিক্যাল ফাইবারের জন্য মাসে গ্রামীণফোনের ব্যয় ৬৮ পয়সা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!