অনুমোদন পেলো ‘ঢাকা উত্তর বন্ড কমিশনারেট’

## নতুন ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের জনবল অনুমোদন দেয়া হয়েছে
## ২২০ জনবল ও ১৭টি যানবাহনের অনুমোদন দিয়ে সিএজিতে অর্থমন্ত্রণালয়ের চিঠি
## গেজেট প্রকাশ করে বন্ডকে দুইভাগ করবে এনবিআর, জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু হতে পারে

শাহেদ রাসেল, বিশেষ প্রতিনিধি: রপ্তানিকে উৎসাহ আর ব্যবসার উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ড লাইসেন্স দেয় সরকার। কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে আসছে। বিশেষ করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য তৈরি না করে সরাসরি খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। অনেক প্রতিষ্ঠান শুল্ককর ফাঁকি দিতে পণ্য রপ্তানি করে, কিন্তু টাকা দেশে আসে না। বন্ধ ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে কাঁচামাল আমদানির মাধ্যমেও বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করা হয়। তবে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে জনবল সংকট আর প্রযুক্তি দুর্বলতায় বন্ডের অপব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান নিয়মিত মনিটরিং ও অডিট করা সম্ভব হয় না।

BOND North page 001 1

বন্ডের অপব্যবহার রোধ আর সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটকে দুই ভাগে (ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ও ঢাকা দক্ষিণ বন্ড কমিশনারেট) ভাগ করা হচ্ছে। জনবল, যানবাহন ও অফিস ব্যবস্থাপনা সামগ্রীতে অনুমোদন দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়; যা কার্যক্রম করতে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের চিফ একাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার বরাবর এই চিঠি দেয়া হয়েছে। গত ১০ মে অর্থমন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আহসান হাবীব সই করা এই চিঠি দেয়া হয়।

এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই চিঠির ফলে এনবিআর এখন বন্ড দুই ভাগ করার গেজেট প্রকাশ করবে। গেজেটে কোন কোন এরিয়া কোন কমিশনারেটের অধীনে থাকবে তা উল্লেখ করা হবে। এনবিআর চাইলে জুলাই থেকে নতুন কমিশনারেট যাত্রা শুরু করতে পারবে।

BOND North page 002

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্ডকে দুই ভাগ করার ফলে বেশি সুফল পাবেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিষ্ঠান নিয়মিত মনিটরিং আর অডিট করা গেলে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া বন্ডের অপব্যবহার রোধে বন্ড অটোমেশন করা হচ্ছে। আর বন্ডকে দুইভাগ করার এনবিআরের নেওয়া উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

BOND North page 003

চিফ একাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, এনবিআরের অধীনে ‘ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট’ এর জন্য ২২০টি পদ (ক্যাডার পদ স্থায়ীভাবে এবং ক্যাডার বর্হিভূত পদ অস্থায়ীভাবে) রাজস্ব খাতে সৃজন এবং ১৭টি যানবাহন ও অন্যান্য অফিস সরঞ্জামাদি সাংগঠনিক কাঠামোভুক্তকরণে সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপন করা হলো। যানবাহনের মধ্যে ৫টি কার (একজন কমিশনার, দুইজন অতিরিক্ত কমিশনার ও দুইজন যুগ্ম কমিশনার ব্যবহার করবেন), দুইটি মাইক্রোবাস (কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য) ও ১০টি মোটরসাইকেল রয়েছে। অনুমোদিত অফিস সরঞ্জামাদির মধ্যে রয়েছে-এয়ার কন্ডিশন, প্লেইন পেপার কপিয়ার, কম্পিউটার সার্ভার, কম্পিউটার, ইউপিএস, টেলিফোন, পিএবিএক্স, ফ্যাক্স মেশিন, পিএ সিস্টেম, ওয়াকিটকি, জেনারেটর, ডিজিটাল ক্যামেরা, মেটাল ডিটেক্টর, বেজ স্টেশন।

New Bond page 001

অনুমোদিত জনবলের বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১২ আগস্ট ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট স্থাপনে সৃষ্টি করা পদের বেতনস্কেল নির্ধারণ করে পদের অনুমোদন দেয় অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ সই করা আদেশে বলা হয়, ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট স্থাপনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বরের চিঠি ও চলতি বছরের ২২ জুন ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের অনুমোদনে এনবিআরের আওতাধীন ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট স্থাপনের জন্য রাজস্ব খাতে ২২০টি পদের অনুমোদন দেয়া হয়। সে অনুযায়ী, শর্ত সাপেক্ষে অর্থ বিভাগ ২২০টি পদের বিপরীতে বেতনগ্রেড নির্ধারণ করে দেয়।

২২০ জনের মধ্যে যারা রয়েছেন, একজন কমিশনার, দুইজন অতিরিক্ত কমিশনার, দুইজন যুগ্ম কমিশনার, তিনজন উপ কমিশনার, সাতজন সহকারী কমিশনার, একজন সহকারী প্রোগ্রামার, ১৫ জন রাজস্ব কর্মকর্তা, ১১০টি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, তিনজন কম্পিউটার অপারেটর, তিনজন অফিস সুপারিনটেনডেন্ট, দুইজন প্রধান সহকারী, একজন সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, ১১ জন উচ্চমান সহকারী, একজন সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, আটজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, একজন ক্যাশিয়ার, আটজন সাব ইন্সপেক্টর, সাতজন ড্রাইভার, ২৬ জন সিপাই ও আটজন অফিস সহায়ক।

এনবিআর সূত্রমতে, রপ্তানি কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সালের ১ নভেম্বর বন্ড কমিশনারেট গঠন করা হয়। শুরুতে শুধু ঢাকায়ই বন্ডের অফিস ছিল। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত রপ্তানিকারকদের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতেই এ দুটি বন্ড কমিশনারেট গঠিত হয়। এখন কমিশনারেট দুটিতে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বন্ড লাইসেন্স, বার্ষিক অডিট, আমদানি প্রাপ্যতা, ইউপি ইস্যু করা হয়। এর বাইরে বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য পাসবই ইস্যু ও ডিপ্লোমেটিক বন্ডের অডিট, সুপারভাইজড বন্ডের কার্যক্রম মনিটরিং করা হয়।

New Bond page 002

ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের হিসাব অনুযায়ী, এ কমিশনারেটের আওতাধীন মোট বন্ড লাইসেন্সের সংখ্যা ৬ হাজার ৬২৬টি। এর মধ্যে সচল রয়েছে ৩ হাজার ১৩৯টি। অন্যদিকে সচল নেই ৩ হাজার ৪৮৭টি।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত বন্ড লাইসেন্সের সংখ্যা বাড়ে, কিন্তু জনবলের বাড়ে না। একজন বন্ড অফিসার বা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার অধীনে এক থেকে দেড়শ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার ফলে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, মনিটরিং ও অডিট করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বন্ডের অপব্যবহার বাড়ছে। সেজন্য বর্তমান ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটকে দুইভাগ করার উদ্যোগ নেয় এনবিআর। দুইভাগ হলে বর্তমান ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট হবে দক্ষিণ (ঢাকা) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। আর নতুন করে ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বিজনেস বার্তাকে বলেন, বন্ডের যে পরিমাণ কাজের চাপ, তাতে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত ভিজিট ও অডিট করতে পারি না। কারণ একজন বন্ড অফিসার বা এআরও এর অধীনে এক থেকে দেড়শ প্রতিষ্ঠান থাকে। তার পক্ষে পিজিক্যালি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যাওয়া, পরিদর্শন করা অসম্ভব। কারণ একেকটি প্রতিষ্ঠান একেক জায়গায়। একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে যেতে অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাগে। নতুন কমিশনারেটের ফলে প্রতিষ্ঠান নিয়মিত মনিটরিং ও অডিট হবে। সময়মত অডিট হলে রাজস্ব ফাঁকি এমনিতেই কমে যাবে।

####

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!