অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়া যাদের বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে পেপার রিটার্ন বা ম্যানুয়াল সিস্টেমে রিটার্ন নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। অনলাইনে অভ্যস্ত না হওয়ায় জ্যেষ্ঠ অনেক সরকারি কর্মচারী রিটার্ন দিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন জানালে তার উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা উনাদের (যাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন বাধ্যতামূলক) থেকে পেপার রিটার্ন আর নেব না।…. আইনগতভাবেই এটা করেছি।’ রোববার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আয়কর তথ্যসেবা মাস-২০২৪ এর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গত ২২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দেশের সব তফশিলি ব্যাংক, মোবাইল ফোন অপারেটর এবং বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয়কর আইন মেনেই করা হয়েছে।দেশের অন্য সব করদাতাকে অনলাইনে ই-রিটার্ন ও আয়কর জমা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৩ নভেম্বর বিকেল চারটা পর্যন্ত ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬৫ জন ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন।ওয়ার্কিং ডে’ তে গড়ে ৮ হাজার করে ই-রিটার্ন দাখিল বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিকে এটা ৫০০-৬০০ ছিল। শেষের দিকে এটি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ হলেও অবাক হব না। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৭ লাখ মানুষের কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন নিবন্ধন রয়েছে।
অনলাইনে করদাতাদের তথ্য নিরাপদ থাকবে আশ্বাস দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ই-রিটার্ন সফটওয়্যারে সিকিউরিটি নিয়ে সমস্যা নেই। যারা এই প্রোগ্রাম তৈরি করেছেন, তারাও দেখতে পারবে না। এক সার্কেলে কর দিলে ওই সার্কেল ছাড়া অন্য কেউ তাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সাইবার আক্রমণের কথা বিবেচনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা নিজেরাও ডেটা সংরক্ষণে রাখব। প্রতিটি দেশেই কিন্তু ই-রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করা হয়। এটা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। সমস্যা হলে তার সমাধানও আছে।
এনবিআর জানায়, আগামী দিনে কাগজের রিটার্ন জমা নেওয়া হবে না। করদাতাদের সেবাগ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলের সুবিধার্থে নভেম্বর মাসব্যাপী শুরু হয়েছে আয়কর তথ্যসেবা মাস। আয়কর রাজস্ব আহরণের কেবলমাত্র অন্যতম প্রধান খাতই নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠারও কার্যকরী মাধ্যম। আয়করের মাধ্যমে রাজস্বের বৃহত্তম অংশ আহরণের ক্ষেত্রে সব দেশই সচেতন প্রয়াস চালায়। কর সচেতনতা বৃদ্ধি ও আরো নিবিড় আয়কর তথ্যসেবা প্রদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর বিভাগ নভেম্বর মাসে বিগত অনেকগুলো বছর ধরে বিশেষ আয়কর তথ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর প্রধানতম উদ্দেশ্যে হলো কর সংস্কৃতির বিকাশ, কর সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সম্মানিত করদাতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা। করদাতা-বান্ধব কর ব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি হিসেবে কর বিভাগ বিগত অনেকগুলো বছর ধরে আয়কর তথ্যসেবা মাসে প্রয়োজনীয় আয়কর তথ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এবার, আয়কর মেলা আয়োজনের পরিবর্তে সব কর অঞ্চলে বিগত বছরের মতো মেলার পরিবেশে নভেম্বর মাসব্যাপী আয়কর রিটার্ন গ্রহণের জন্য সেবা দেওয়া হবে।
এনবিআর জানায়, বাংলাদেশের ৮৬৯টি সার্কেলের করদাতাদের ৪১টি কর অঞ্চলে সেবা বুথ স্থাপনের মাধ্যমে নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে আয়কর রিটার্ন গ্রহণের সেবা দেওয়া হবে। আয়কর তথ্যসেবা কেন্দ্রে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, অনলাইন রিটার্ন রেজিস্ট্রেশন, অনলাইন রিটার্ন দাখিল, ই-পেমেন্ট (এ-চালান ও অন্যান্য) এর ব্যবস্থা রাখা হবে।