অধ্যাদেশ সংশোধন করে এনবিআর ভাগ হবে: অর্থ মন্ত্রণালয়

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মুখে এনবিআর বিভক্তি নিয়ে জারি করা অধ্যাদেশ কার্যকর করা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে অধ্যাদেশটি সংশোধন করা না পর্যন্ত এনবিআরের সকল কার্যক্রম আগের মতো চলবে জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থায় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এছাড়া বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষূন্ন রেখে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কিভাবে প্রণীত হবে তা এনবিআর ও গুরুত্বপূর্ণ সকল অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, অধ্যাদেশ সংশোধন করা যেহেতু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই এটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এনবিআর ও তার কর্মকর্তারা আগের মতোই পরিচালিত হবে। বৃহস্পতিবার রাজস্ব বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত দুইজন সদস্যের মধ্যস্ততায় দিনব্যাপী দফায় দফায় আলোচনার একপর্যায়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের পাঠানো সমঝোতা প্রস্তাব সম্পূর্ণ মেনে নেয়ার পরও— শেষ মূহুর্তে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তার প্রেক্ষিতেই অধ্যাদেশ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এনবিআরের কার্যক্রম আগের নিয়মে সচল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষূন্ন রেখে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কিভাবে প্রণীত হবে, তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও গুরুত্বপূর্ণ সকল অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে’- বলে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাস্টমস ও কর ক্যাডারের সদস্যদের পদ-পদবি কমানোর কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই। বরং সংস্কার কাজ সম্পাদন হলে তাদের পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সচিব পদে নিয়োগসহ পদোন্নতির সুযোগ আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। ‘রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থবছরের শেষ সময়ে জাতীয় বাজেট কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অফিস সময়ে দপ্তরে উপস্থিত থেকে তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনের মাধ্যমে— রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালু রেখে এবং সম্মানিত করাদাতাগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেগবান করার জন্য অনুরোধ করা হল’- এতে আরও বলা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, ১২ মে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ জারির পর— এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে ২০ মে এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে মিটিং করেন অর্থ উপদেষ্টা; বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা এবং রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির ৫ জন সম্মানিত সদস্য। এসময় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ জন প্রতিনিধি সভায় অংশ নেন। এই সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দুইজন প্রতিনিধি, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সদস্যগণ বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। উপদেষ্টারা সকলের বক্তব্য ধৈর্য্য সহকারে শোনেন এবং তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। আলোচনায় উত্থাপিত সকল বিষয় অত্যন্ত সহানুভুতির সাথে বিবেচনায় নিয়ে সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত দেন করেন যে, “রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সকল অংশীজনের সাথে বিশদ আলোচনাক্রমে— জারীকৃত অধাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর, উক্ত অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে। এমন ফলপ্রসু আলোচনার পর যে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে তা মেনে না নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ পুনরায় অসহযোগ আন্দোলনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার কোন যৌক্তিক কারণ নেই” বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অধ্যাদেশটি জারি করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ- দুইটি বিভাগের নতুন করে সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন করত: পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, সচিব কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন ইত্যাদি সম্পাদন করতে হবে—যা যথেষ্ঠ সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাছাড়া, দুইটি নতুন বিভাগের জন্য “অ্যালোকেশন অব বিজনেস” এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এসকল আইনের সাথে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। একাজগুলোও সময়সাপেক্ষ কাজ। যেহেতু এই কাজগুলো সম্পাদন না করে, কোনভাবে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়— সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনই বিলুপ্ত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানানো হয়েছে।

** চার দাবিতে অনড়, প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!