‘খসড়া অধ্যাদেশ’ বাতিলসহ চার দাবি কর ক্যাডারদের

** এনবিআর বিলুপ্তি চান না ক্যাডার কর্মকর্তারা
** অর্থ উপদেষ্টাকে এনবিআরে এনে দুই ক্যাডার কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন
** দাবি আদায়ে দুই ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন যৌথ জরুরি সভা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে

এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা-এই দুইভাগে ভাগ হচ্ছে। ১৭ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে স্বার্থ বিরোধী হওয়ায় ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন। একইসঙ্গে এনবিআর বিলুপ্ত না করাসহ আরো তিনটি দাবি জানিয়েছে আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

শনিবার (৩ মে) রাজধানীর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) এই চারটি দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সভায় এনবিআর বিলুপ্ত করা, খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলসহ নানান বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যাতে সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তারা বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেছেন। তবে চারটি দাবি জোরালো ছিলো। যার মধ্যে রয়েছে-রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল, এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত বাতিল, অর্থ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে দুই ক্যাডারের (কাস্টমস-ভ্যাট ও আয়কর) কর্মকর্তাদের আলোচনার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দুই ক্যাডারের জরুরি সাধারণ সভায় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ।

সভায় উপস্থিত একাধিক আয়কর কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খসড়া প্রণয়নের পূর্বে শ্বেতপত্র কমিটির সুপারিশ এবং রাজস্ব খাত সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আমলে নেয়া হয়নি। এনবিআর থেকে যেই খসড়া পাঠানো হয়েছে, নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা তা পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিয়েছেন। রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ের অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। রাজস্ব খাত সংস্কারের জন্য সরকার পরামর্শক কমিটি গঠনের পর দুই অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা তাদের মতামত দিয়েছিল। সেই কমিটি কয়েক মাস আগে প্রতিবেদন জমা দিলেও তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। পরে তড়িঘড়ি করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। রাষ্ট্রের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারকে বাড়তি সুবিধা দিতে গিয়ে গোপনীয়তার সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদে খসড়ার অনুমোদন নেয়া হয়। যাতে কাস্টমস-ভ্যাট ও আয়কর ক্যাডারের শত শত কর্মকর্তা ব্যথিত হয়েছেন। ৫৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এনবিআরকে ভেঙে ফেলাকে রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থবিরোধী বলে মনে করেন আয়কর কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তারা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টার গঠিত সংস্কার কমিটির স্পিরিটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজস্ব বিরোধী প্রস্তাবকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। খসড়ার বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন তারা। এতে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব পদে রাজস্ব অভিজ্ঞতাবিহীন কর্মকর্তাকেও নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা, নীতি বিভাগের বিভিন্ন পদে বিভিন্ন বিভাগের জন্য উন্মুক্ত রাখা, নীতি বিভাগকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের তদারকির ব্যবস্থা রাখা, অভিজ্ঞতাবিহীন কর্মকর্তাকেও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদে পদায়নের সুযোগ রাখা, প্রশাসনিক অনুবিভাগে একমাত্র প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে; যা রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী।

এর আগে ২৬ এপ্রিল এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের এক বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। সভায় একই দাবি জানিয়েছেন এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

** সংশোধনের আশ্বাস, কর্মকর্তাদের অসন্তোষ-অবিশ্বাস
** খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে কর্মকর্তাদের অসন্তোষ, কর্মসূচি
** সচিব নিয়োগে ‘মতামত’ উপেক্ষিত, নাখোশ কর্মকর্তারা
** আয়কর-কাস্টমসের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্ষোভ!
** এনবিআর পৃথক করার খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদন
** বিলুপ্ত হচ্ছে এনবিআর, কমবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ
** এনবিআর ভেঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনে দুই বিভাগ হচ্ছে
** প্রশাসন ও নীতি উইং পৃথক করার সুপারিশ
** নীতির স্বাধীনতা নাকি প্রশাসনিক বিভাজন
** স্বতন্ত্র বিভাগ গঠনে রাজস্ব আহরণ বাড়বে?
** রাজস্ব কমিশন নয়, বিভাগ হবে
** আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস থেকে হবে ‘চেয়ারম্যান’
** এনবিআর সংস্কারে পাঁচ সদস্যের ‘পরামর্শক’ কমিটি
** এনবিআর দুই ভাগ হচ্ছে, ঈদের আগেই অধ্যাদেশ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!