দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালায় অতিরিক্ত কর কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) শাহ মোহাম্মদ মারুফকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সই করা এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মূলত দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও কর বিভাগের ভাবমূ্র্তি নষ্ট করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে এনবিআরের একটি সূত্র বিজনেস বার্তাকে জানিয়েছেন।
আদেশে বলা হয়েছে, বগুড়া কর অঞ্চলের অতিরিক্ত কর কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) শাহ মোহাম্মদ মারুফের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(ঘ) অনুযায়ী দুর্নীতি পরায়নতার অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যেহেতু সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ১২(১) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা প্রয়োজন ও সমীচীন। তাই শাহ মোহাম্মদ মারুফকে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
সূত্রমতে, অতিরিক্ত কর কমিশনার শাহ মোহাম্মদ মারুফের নামে-বেনামে সম্পদ কেনার সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। ব্যাংকেও তার জমা আছে কোটি টাকা। ৮০ হাজার টাকা বেতনের সরকারি কর্মচারীর রাজধানীর বারিধারার কূটনৈতিক জোনে ১২ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কেনার খবর নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যেও চলছে নানা আলোচনা। এই কর্মকর্তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পদ কিনেছেন। তার সম্পদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে কর গোয়েন্দারা। এখন পর্যন্ত তারা শাহ মারুফের নামে-বেনামে (নিজ, স্ত্রী, ভাই-বোনের নামে) প্রায় ৩০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছেন। তবে মারুফের আয়কর নথিতে সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তার চাকরি ছাড়া আয়ের অন্য কোনো উৎস নেই।
তথ্যসূত্র অনুযায়ী, বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার ১১ নম্বর সড়কে অবস্থিত ‘বিটিআই উইন্ড ফ্লাওয়ার’ নামের দশতলা অভিজাত ভবনের সাততলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এনবিআরের যুগ্ম কমিশনার শাহ মোহাম্মদ মারুফ। প্রায় সোয়া আট কাঠা জমির ওপর নির্মিত এই ভবনের প্রতিটি তলায় একটি করে ইউনিট, যেখানে মারুফের ফ্ল্যাটের আয়তন ৩,২০০ বর্গফুট। অ্যাপার্টমেন্টটি সাজানো হয়েছে দামি আসবাব ও বিদেশি বাথরুম ফিটিংসে, যার অভ্যন্তরীণ নকশায় ব্যয় হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বর্গফুট জায়গার মূল্য ৪০ হাজার টাকা, ফলে ফ্ল্যাটটির মূল্য দাঁড়ায় ১২ কোটি টাকার বেশি। আড়াই বছর আগে স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাটটি কিনে তিনি পরিবারসহ সেখানে বসবাস শুরু করেন। তবে এক সময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা তার স্ত্রী (বর্তমানে গৃহিণী) আয়কর নথির জটিলতার কারণে এখনো ফ্ল্যাটটির নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারেননি।
কর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তে পূর্বাচলের রূপগঞ্জ অংশের গোলাপ মৌজায় মারুফ ও তার দুই ভাইয়ের নামে ১৫ কাঠা জমির তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া উত্তরায় ১৫ নম্বর সেক্টরে ৩ নম্বর রোডের ১২ নম্বর প্লটটি মারুফের (তিন কাঠা)। আর নিকুঞ্জে ৫ নম্বর রোডের ৪৮ নম্বর প্লটটি (তিন কাঠা) বোনের নামে কিনেছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে আছে দুটি গাড়ি। স্ত্রীর গাড়ির দাম ৮০ লাখ টাকা। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে শাহ মারুফের বিরুদ্ধে। তদন্তে এসব সম্পদ অবৈধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ কর দিতে হবে।
** ৮০ হাজার টাকা বেতনের জেসি থাকেন ১২ কোটি টাকার ফ্ল্যাটে
** কর কমিশনার কবির উদ্দিন মোল্লার সম্পদের পাহাড়
** কর কমিশনার ও তাঁর স্ত্রীর অবৈধ সম্পদ অর্জন
** টাকা বৈধ করতে ‘কুমির-বাঘের’ ভয় দেখান কমিশনার!
** ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কর কমিশনার বরখাস্ত
** উপ-কর কমিশনার মেহেদীর ছয় কোটি টাকার সম্পদ!
** কমিশনার রঞ্জিতের পরিবারের ১২৩ ব্যাংক হিসাব জব্দ
** বরখাস্ত তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকে চিঠি
** কর পরিদর্শক সাইফুল: ১৮ বছরে বৈধ আয় ৪৩ লাখ, মালিক অর্ধ-শত কোটি টাকার
** কর কমাতে ডিসিটির ঘুষ ২৫ লাখ, ২৫ লাখ অফিসের
** রাজস্ব কর্মকর্তার ২৩ লাখ টাকা জব্দ, টাকার উৎস নেই