অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন অকার্যকর, রাজস্ব ক্ষতি

বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও কার্যকর না হওয়ায় সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। পদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের অনেকেই এ আইন সম্পর্কে জানেন না।১৯৮৪ সালের অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, দেশের যেকোনো সেন্টারে বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা বা অন্য কোনো অনুষ্ঠান করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। এক্ষেত্রে অতিথি ১০০ বা তার কম হলে সরকারকে কোনো ধরনের রাজস্ব দিতে হয় না। তবে এর বেশি হলেই জনপ্রতি ২৫ টাকা হারে রাজস্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োগের অভাবে কেউই মানছেন না এই আইন। শুধু তা-ই নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতিও নিতে দেখা যায় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী পৌরসভার প্রধান নির্বাহী আবুজার গিফরি নিজেই তেমন কিছু জানেন না উল্লেখ করেন। বলেন, রাজস্ব দেওয়া তো দূরের কথা, গত ১৫ বছরে কেউ অনুমতির জন্যই আসেনি। এরকম আইন জেলা প্রশাসকের অফিসে থাকতে পারে। আমাদের আছে কি-না, খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।

ফেনীতে গত বছর ৯ হাজার ৮৫৩টি বিয়ে হয়েছে। প্রতিটি বিয়ে অনুষ্ঠানে গড়ে তিন শতাধিক অতিথি অংশ নেয় বলে জেলা শহরের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার থেকে জানা গেছে। পারিবারিক, সামাজিক, অভিজাত রেস্তোরাঁ ও জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক কমিউনিটি সেন্টারে বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এছাড়াও শতাধিক অতিথি নিয়ে ঘরোয়া ও কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হলে আয়োজিত হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক অসংখ্য অনুষ্ঠান।

সম্প্রতি স্মৃতি কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশে দুটি বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক অতিথির আপ্যায়ন চলছে। অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী কনের পিতার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কাছে অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ১০০ অতিথির বেশি হলে জনপ্রতি ২৫ টাকা করে রাজস্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে জানালে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান।ফেনী গ্র্যান্ড সুলতান কমিউনিটি সেন্টার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল বলেন, প্রতিনিয়ত নানারকম অনুষ্ঠান হলেও কাউকে রাজস্ব দিতে ও নিতে দেখিনি।

ফেনী জেলায় অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। এর ফলে সরকার প্রতি বছর বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি জনসচেতনতার অভাবের কারণে প্রতিযোগিতামূলকভাবে অতিথির সংখ্যাও বাড়ছে। ১৯৮৪ সালের ৩০ আগস্ট খাদ্য মন্ত্রণালয় এই আইন চালু করে। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ১০০ জনের বেশি অতিথি আপ্যায়নের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বা সিটি ও পৌর প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া ১০০ জনের বেশি অতিথির জন্য জনপ্রতি ২৫ টাকা আপ্যায়ন ফি জমা দিতে হয়। আইন অমান্য করলে প্রতিজনের জন্য ১০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

আপ্যায়নকারী নির্ধারিত জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট ১৯১৩-এর আওতায় সার্টিফিকেট মামলা করার বিধান রয়েছে। এছাড়াও আইন অমান্যকারীর কাছে থেকে শাস্তিমূলক মাশুল আদায় এবং আইনের প্রয়োগের জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর নিযুক্ত ক্ষমতা সকল গেজেটেড কর্মকর্তার মতো দেওয়া হয়।

২০০২ সনের ৮ এপ্রিল এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিয়ে, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ১৫০ জন পর্যন্ত অতিথি বিনা মাশুলে আপ্যায়ন করা যাবে। ১৫১ জন থেকে এক হাজারজন পর্যন্ত মাথাপিছু ২০ টাকা ও তদূর্ধ্ব ক্ষেত্রে মাথাপিছু ১০ টাকা হারে মাশুল ধার্য করা হয়েছে। এ আদেশ অমান্যকারীকে দিগুণ হারে জরিমানা করা হবে বলে আইনে বলা হয়।

এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। তবে ওরশ, ধর্মসভা, চেহলাম ও শ্রাদ্ধের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না। ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, আইনটি বিদ্যমান থাকলেও এর কার্যকারিতা ও প্রয়োগ নেই। শিগগিরই আইন পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!