অডিট বা নিরীক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে দেশ থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা পাচার ও ঋণ খেলাপি বেড়েছে বলে মনে করছে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)। মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইসিএমএবির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি দাবি করেন, দেশের ব্যাংকগুলোর লাখ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের দায় থেকে নিরীক্ষকরাও মুক্ত নয়। ‘নিরীক্ষার আওতা বাড়াতে সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আইসিএমএবির সভাপতি জানান, দুর্বল নিরীক্ষা ব্যবস্থার কারণেই ব্যাংক, আর্থিক খাত এবং পুঁজিবাজার থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা সহজ হয়েছে। তার মতে, মানহীন নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আগ্রহ হারাচ্ছেন। একই কারণে দেশীয় সুস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে দ্বিধায় পড়ে।
তিনি বলেন, বিগত দেড় দশকের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির ফলে বাংলাদেশের নিরীক্ষা ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকারিতা হারিয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে, আর নিম্নমানের নিরীক্ষা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করে—যার ফলে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে যদি মানসম্পন্ন নিরীক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকত, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ চার লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত না। বর্তমানে বাংলাদেশে অনুমোদিত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় তিন হাজার, যেখানে নেপালে এই সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার এবং পাকিস্তানে ১০ হাজারের বেশি। এই প্রেক্ষাপটে, কোম্পানি আইনে যেসব প্রতিষ্ঠানে সিএ ও সিএমএ প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করে না, সেসব ক্ষেত্রেও নিরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আইসিএমএবি। এ লক্ষ্যে, অর্থবিল পাসের আগেই নিরীক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। জাতীয় স্বার্থে এবং আর্থিক সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে সিএমএ-দের সুযোগ দিয়ে বিধানটি ফের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানান তিনি।